প্রচ্ছদ সারাদেশ রংপুর বিভাগ বীর প্রতীক তারামন বিবি আর নেই

বীর প্রতীক তারামন বিবি আর নেই

মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক তারামন বিবি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শুক্রবার দিবাগত রাতে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে ৬২ বছর বয়সে তিনি মারা যান। মরহুমার ছেলে আবু তাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আবু তাহের জানান, তারামন বিবি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট আর ডায়েবেটিসে ভুগছিলেন। নভেম্বরেও তাকে ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাতে মায়ের অবস্থা খারাপের দিকে যায়। রাত ১টা ২৭ মিনিটে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

শনিবার দুপুরে রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া তালতলা কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরপ্রতীক তারামন বিবিকে দাফন করা হবে বলে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানিয়েছেন। এর আগে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন।

কুড়িগ্রামের শংকর মাধবপুরে ১১ নম্বর সেক্টরে কমান্ডার আবু তাহেরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তারামন বিবি। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, পাকিস্তানিদের খবর সংগ্রহের পাশাপাশি অস্ত্র হাতে সম্মুখ যুদ্ধেও তিনি অংশ নিয়েছেন তিনি। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা কিশোরী তারামন বিবিকে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিলেন রান্নার কাজে সহযোগিতার জন্য। পরে সেখানে তিনি অস্ত্র চালনা শেখেন।

একদিন দুপুরে খাওয়ার সময় পাকিস্তানি বাহিনী একটি গানবোট নিয়ে সেখানে হানা দেয়। তারামন বিবিও সেদিন সহযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন এবং শত্রুদের পরাস্ত করেন। এরপর বেশ কয়েকটি যুদ্ধে পুরুষ সহযোদ্ধাদের পাশাপাশি অস্ত্র হাতে লড়াই করেন এই বীর নারী।

দুর্ধর্ষ সেই কিশোরীর অসীম সাহসিকতার জন্য বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে তা তুলে দিতে ২২ বছর লেগে যায়। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে তারামনকে বীর প্রতীক খেতাব দেয়। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের একজন গবেষক প্রথম তাকে খুঁজে বের করেন। নারী সংগঠনগুলো তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ওই বছর ১৯ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে তারামন বিবির হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।

তারামন বিবির স্বামীর নাম আবদুল মজিদ। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।