প্রচ্ছদ সারাদেশ রাজশাহী বিভাগ পেয়ারায় ঢলেপড়া রোগে সর্বস্বান্ত হচ্ছে রাজশাহীর চাষিরা

পেয়ারায় ঢলেপড়া রোগে সর্বস্বান্ত হচ্ছে রাজশাহীর চাষিরা

বাগান নষ্ট হয়ে সর্বস্বান্ত রাজশাহীর পেয়ারাচাষিরা। রাজশাহী এখন প্রায় পেয়ারা শূন্য। উইল্টিং (ঢলেপড়া) ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৯৩৯.৫ হেক্টর জমির পেয়ারা বাগান। এতে কৃষকের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় কোটি টাকার অধিক।

কৃষি বিভাগ জানায়, পেয়ারাচাষিরা অধিক লাভের আশায় ধানের আবাদ বাদ দিয়ে রাজশাহীসহ সারা বরেন্দ্র অঞ্চল জুড়ে পেয়ারার আবাদ শুরু করে। এতে তারা লাভবানও হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত হলে অধিকাংশ পেয়ারা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকদের অর্থনৈতিক এ ক্ষতি পূরণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজশাহী জেলায় গত ২০১৬-১৭ মৌসুমে রাজশাহীতে পেয়ারার আবাদ হয়েছিল ৩ হাজার ৮৩৭.৫ হেক্টর। ২০১৭-১৮ বছরে আরো নতুন আবাদ হয়েছে ১৯৪ হেক্টর জমিতে। গত দুই বছরে রাজশাহীতে পেয়ারার আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৩০.৫ হেক্টর। উইল্টিং (ঢলেপড়া) ছত্রাক জাতীয় রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয় রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের অধিকাংশ থাই পেয়ারার বাগান। এর ফলে কমে গেছে পেয়ারার উৎপাদন। এতে সর্বস্বান্ত হয়ে মাথায় হাত পড়েছে পেয়ারা চাষিদের। এখন থাই পেয়ারার সঙ্গে পলিপেয়ারার কলম করে নতুন পেয়ারা চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন ফল গবেষকরা।

উইল্টিং (ঢলেপড়া) ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্তসহ বিভিন্নভাবে পেয়ারা বাগান নষ্ট হয়ে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছ মারা গেছে ৬৫ হেক্টর, জলাবদ্ধতায় ১৫ হেক্টর, গাছ কর্তন করে ১৪১ হেক্টর এবং অবশিষ্ট জমির পেয়ারা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢলেপড়া রোগে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুঠিয়া উপজেলায়। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত পেয়ারা বাগানের পরিমাণ ৩৯৩ হেক্টর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গোদাগাড়ী উপজেলা। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত পেয়ারা বাগানের পরিমাণ ২৮৬ হেক্টর। তৃতীয় স্থানে রয়েছে চারঘাট উপজেলা। সেখানে পেয়ারা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২১ হেক্টর। বোয়ালিয়ায় ২.৫, পবায় ৫, দুর্গাপুর ৫, বাঘায় ২০ হেক্টর মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পেয়ারা বাগানের পরিমাণ ৯৩৯.৫ হেক্টর জমি।

গত বছর এসময় যেখানে পেয়ারায় রাজাশাহীর বাজার ছিল জমজমাট সেখানে রাজশাহীর বাজার এখন প্রায় পেয়ারা শূন্য। বাজারে পেয়ারা আমদানি কমে যাওয়ায় দামও বেড়ে গেছে। প্রতি কেজি পেয়ারার মূল্য ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ২০১৬-১৭ সালে যেখানে প্রতি কেজি পেয়ারার মূল্য ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এমনকি ৩০ টাকা কেজিও বিক্রি হয়েছে। সেই পেয়ারা এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ ও ১৬০ টাকা কেজি দরে। পেয়ারার বাগান নষ্ট হওয়ায় বাজারে পেয়ারার এই মূল্যবৃদ্ধি বলে জানিয়েছেন পেয়ারা ব্যবসায়ীরা।

পেয়ারা চাষি রফিকুল ইসলাম নয়ন বলেন, পেয়ারার মূল্য বৃদ্ধিতে অনেক কৃষক বাড়তি কিছু অর্থ পেলেও পেয়ারার উৎপাদন কমে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি।

গত কয়েক বছরে পেয়ারা চাষিরা রাজশাহীকে ফলভান্ডারে পরিণত করেছিলেন। তখন পেয়ারায় রাজশাহীর বাজার থাকতো ঠাঁসা। অথচ রাজশাহীর বাজারে এখন ভাল পেয়ারা খুঁজেই পাওয়া যায় না।

রাজশাহী ফল গবেষণা ও রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, উইল্টিং (ঢলেপড়া) ভাইরাস জাতীয় রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির পেয়ারা বাগান নষ্ট হয়েছে। উক্ত কর্মকর্তার তথ্য মতে যে জমিতে ঢলেপড়া বা উইল্টিং রোগে আক্রান্ত হয় সে পেয়ারা বাগান নষ্ট হয়ে যায়। যে জমিতে উইল্টিং রোগ হবে ঐ জমিতে আগামি দুই-তিন বছরের মধ্যে পেয়ারা বাগান না করার পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী ফল গবেষণা কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দীন।

এ ব্যাপারে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দীন আরো বলেন, উইল্টিং ডিজিজ (ঢলে পড়া) নামক এক ধরনের ছত্রাক রোগে আক্রান্ত হয়ে পেয়ারার বাগান নষ্ট হচ্ছে। এটি একটি নতুন ধরনের মাটিবাহিত ছত্রাক জাতীয় রোগ। এ রোগ কোথা থেকে আসলো এ সম্পর্কে আমাদের আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তবে এ রোগ বাগানের মাটি থেকেই উৎপত্তি হতে পারে বলে তার ধারণা। তিনি বলেন, থাই পেয়ারা একটি সংবেদনশীল পেয়ারা। যত দিন না এ ছত্রাক রোগ ধ্বংস হয়ে না যাচ্ছে ততদিন থাই পেয়ারার সঙ্গে পলিপেয়ারার কলম বেঁধে পেয়ারা চাষের পরামর্শ দেন তিনি।