প্রচ্ছদ সারাদেশ রংপুর বিভাগ পীরগঞ্জে পুলিশ হেফাজতে আটক ব্যাক্তির রহস্যজনক মৃত্যু

পীরগঞ্জে পুলিশ হেফাজতে আটক ব্যাক্তির রহস্যজনক মৃত্যু

বখতিয়ার রহমান, পীরগঞ্জ (রংপুর) : রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালিন কথিত মাদক ব্যবসায়ী সামছুল ইসলাম (৫৫) নামের এক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু ব্যাক্তি পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার শান্তিপুর গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের পুত্র।

বুধবার সকালে এ মৃত্যুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে শত শত নারী-পুরুষ দোষী পুলিশের শাস্তির দাবিতে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ঘেরাও করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হাজারো জনতার সমাগম ঘটে। প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে ভেন্ডাবাড়ী-বড়দরগাহ সড়কটি উত্তেজিত জনতা অবরোধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসাইন দোষী পুলিশদের বিচারের আশ্বাস দিলেও অনড় অবস্থায় থাকে জনতা। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা তদন্ত কেন্দ্রের দিকে ঢিল ছুড়লে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। জনতাও ঢিল ছুঁড়ে পাল্টা জবাব দেয়। পাল্টা-পাল্টি আক্রমনে সহকারী পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান সহ ৮ পুলিশ ও পথচারী ভিক্ষুক আব্দুল কাদের, বড়দরগাহ্ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক, কাঠমিস্ত্রি আইয়ুব আলী, ভেন্ডাবাড়ীর বড়াল, নিশাত, রবিনও মনিরুল সহ শতাধিক জনতা আহত হয়। এক পর্যায়ে অবস্থানরত জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। আহতদের অনেককে মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে ।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, মঙ্গল রাতে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম তার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পীরগঞ্জের বড়দরগাহ্ নামক স্থান হতে মাদক ব্যবসার অভিযোগে সামছুল ইসলামকে আটক করে নিয়ে আসে। বুধবার সকালে সামছুল ইসলামের লোকজন তদন্ত কেন্দ্রে আসলে পুলিশ জানায়, সামছুল ইসলাম গভীর রাতে নিজের পরণের সার্ট গলায় পেঁচিয়ে আতœহত্যা করেছে। এদিকে নিহতের স্ত্রী মমেনা বেগম, কন্যা সান্তনা ও বোন ফাতেমা বেগম হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, সে মাদকাসক্ত নয় এবং মাদক ব্যবসার প্রশ্নই আসেনা। সে একজন ছাগল ব্যবসায়ী। রাত ১১টায় শেষ সাক্ষাতের সময় আমাদের কাছে ১ লাখ টাকা দাবী করে। দাবীকৃত টাকা না পেয়ে আতœহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান তালুকদার জানান, পুলিশ হেফাজতে মৃত ব্যক্তির এলাকায় মাদক সংশ্লিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। সে ছাগল ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনরত অনেকেই বলেন, পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল দীর্ঘদিন যাবত ভেন্ডাবাড়ী আইসি কেন্দ্রে আটক বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন মানুষকে আটক করে শারিরীক ও মানষিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করলেও হাজতে আত্মহত্যার দায় স্বীকার করেন। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসাইন জানান, বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে আক্রমন করলে পুলিশ শর্টগান দিয়ে আনুমানিক ৩৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

বিকালে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার ঘঁনাস্থল পরিদর্শন করেন । এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, লাশের ময়না তদন্তে যদি হত্যার আলামত মিলে তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে ।এ ব্যাপারে থানায় ইউডি মামলা হয়েছে এবং বিকালে লাশ ময়না তদন্তের জন্য জন্য মর্গে প্রেরন করা হয়েছে ।