প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ পাইপলাইন দিয়ে ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানি হবে : প্রধানমন্ত্রী

পাইপলাইন দিয়ে ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানি হবে : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের নির্মাণকাজ যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভারতের শিলিগুড়ি হতে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন নির্মাণ উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ইতিহাসে আরেকটি মাইলফলক। এটি হবে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে প্রথম পাইপলাইন যা দিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের শিলিগুঁড়িতে অবস্থিত নোমালিগড় তেল শোধনাগার থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে। প্রাথমিকভাবে বছরে আড়াই লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করা হবে এবং তা পর্যায়ক্রমে চার লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভারত থেকে রেল ওয়াগানের মাধ্যমে ডিজেল আমদানির একটি চালান বাংলাদেশে এসেছিল। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্রিয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা-টঙ্গী সেকশন তৃতীয় চতুর্থ ডুয়েল গ্যাস লাইন এবং টঙ্গী জয়দেবপুর সেকশনের ডুয়েল ডাবল গ্যাস লাইন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হলো। ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের তৃতীয় চতুর্থ ডুয়েল গ্যাস লাইন ও টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনের ডুয়েল ডাবল গ্যাস লাইন চালু হলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়ে উত্তরাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও দ্রুততর হবে। এ প্রকল্পের অবস্থান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত। প্রকল্পটির আওতায় রেলওয়ের অবকাঠামোসহ ৯৬ কিলোমিটার ডুয়েল গেজে রেললাইন নির্মাণ করা হবে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। এরপরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

নরেন্দ্র মোদি বলেন,‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারত এবং বাংলাদেশের মন্ত্রিগণ ও প্রশাসনের সবাইকে নমস্কার। কয়েক দিনের মধ্যে এটা আমাদের দ্বিতীয় দিনের ভিডিও কনফারেন্স। আমাদের সম্পর্ক শুধু প্রযুক্তির জন্যই না, এর পেছনে কারণ হলো বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবাধ গতি ও নির্বাধ প্রগতি। বন্ধুরা আজ যে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন প্রকল্প শুরু হয়েছে, এর মাধ্যমে এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে। আমার বিশ্বাস পাইপলাইন বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাজে লাগবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তর অংশে এই পাইপলাইনের কারণে সস্তা দামে জ্বালানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। যদিও এই পাইপলাইন ভারতের বড় অর্থায়নে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, কিন্তু আমাদের ইচ্ছে, কাজ শেষ হওয়ার পরে এটা বাংলাদেশ সরকার ও মানুষকে দিয়ে দেওয়া।’

নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমরা যেই রেল প্রকল্পে কাজ শুরু করেছি, এটা শুধু ঢাকার মানুষকে যানজট থেকেই মুক্তি দেবে না বাণিজ্য মুনাফাও বাড়াবে। আমার বিশ্বাস রেলওয়ে প্রকল্প থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় এবং শহরের পরিবহন ব্যবস্থাকে সহায়তা করবে।’

এ সময় মোদি বলেন, ‘১৯৬৫ সালের আগে আমাদের যেই যোগাযোগ তা বহাল রাখাই আমাদের লক্ষ্য। এতে আমাদের অনুপ্রেরণা মিলে। আমি খুশি যে, ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর প্রকল্প আমাদের ২১ শতকের প্রয়োজন অনুযায়ী হচ্ছে। মাত্র ১০ দিনে আমরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাঁচ প্রজেক্ট উদ্বোধন করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে এ সময় নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এই গতি এই মোমেন্টাম আপনার সফল নেতৃত্ব ছাড়া সম্ভব ছিল না। আমার বিশ্বাস, আগামী দিনে বাংলাদেশের মানুষের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমরা একইভাবে কাজ করতে থাকব।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাঁর জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা জানান।

গতকাল সোমবার এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, ভারতীয় এলওসির (লাইন অব ক্রেডিট) অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প দুটির উদ্বোধন করা হবে।

তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছিল, ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনের অধীন ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্যে সেকশনাল ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মিত হলে সমন্বিত ও গতিময় ট্রেন সার্ভিস প্রবর্তনের মাধ্যমে শহরতলি এবং অন্যান্য জেলার যাত্রীসাধারণের রাজধানী ঢাকায় স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও সময় সাশ্রয়ী যাতায়াত সম্ভব হবে।

প্রকল্পটিতে ভারতীয় এলওসির বরাদ্দ ৯০২ কোটি ৬৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার খরচ করবে ২০৪ কোটি ১৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।

যাত্রীসাধারণের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিক সংখ্যক ট্রেন চালু করার লক্ষ্যে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। ফলে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

এ প্রকল্পে নির্মিতব্য অবকাঠামোগুলো রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, টঙ্গী-জয়দেবপুর হয়ে উত্তরাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও গতিময় করার ক্ষেত্রে ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর ফিডার সেকশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকন্স-কল্পতরু যৌথভাবে কাজটি করবে। ৩৬ মাসে কাজটি করতে হবে। এতে ৯৬ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মিত হবে। এ ছাড়া কালভার্ট ২৫টি, প্ল্যাটফর্ম ছয়টি, প্ল্যাটফর্ম সেড ছয়টি, ফুটওভার ব্রিজ ১২টি, স্টেশন বিল্ডিং চারটি এবং অন্যান্য কাজ করা হবে।

অপর এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, বর্তমানে আমদানি করা তেল চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে খালাস করে চট্টগ্রাম ডিপোতে সঞ্চয় করে রাখা হয়। পরে কোস্টাল ট্যাঙ্কে করে খুলনার দৌলতপুর ডিপোতে আনা হয়। সেখানে আনলোড করে আবার রেলের ওয়াগনে আপলোড করে নিয়ে যাওয়া হয় পার্বতীপুরে। এ প্রক্রিয়ায় পরিবহনজনিত সমস্যা, অতিরিক্ত সময় এবং অর্থের অপচয় হয়। তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আনলে এ তিনটারই সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে এ পাইপলাইন কার্যকর অবদান রাখবে।

পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি-সংক্রান্ত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি গত বছরের ২২ অক্টোবর স্বাক্ষরের পর চলতি বছরের ৯ এপ্রিলে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা হয়। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রথম তিন বছর ২ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করা হবে। পর্যায়ক্রমে এ সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে শেষ পাঁচ বছর চার লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে। বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে প্রয়োজনে জ্বালানি তেলের আমদানি এই পাইপলাইনের মাধ্যমে আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। নুমালীগড় রিফাইনারি ওই পাইপলাইনের মাধ্যমে ১৫ বছরের জন্য ডিজেল সরবরাহ করবে। উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে এ সময় বর্ধিত করা হবে।

ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনে চলতি বছরের আগস্ট-ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে আমদানি করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।