প্রচ্ছদ সারাদেশ রংপুর বিভাগ পরীক্ষা ছোটদের, দুশ্চিন্তা বড়দের

পরীক্ষা ছোটদের, দুশ্চিন্তা বড়দের

এ.এস. লিমন রাজারহাট( কুড়িগ্রাম ) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে সমাপনী পরীক্ষার ৭টি কেন্দ্রে উপচৈ পরা ভিড়। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা,অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,রাজারহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের সামনে সকাল ৯ টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষের সমাগম। বিদ্যালয়টির গেটের সামনে রাস্তায় মানুষের সে জটলা গিয়ে ঠেকেছে রাজারহাট বাজার পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ১০ টায় পরীক্ষা শুরুর সময় নির্ধারণ করা থাকলেও প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী এসে উপস্থিত হয় সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে। ফলে মাঠের ধুলোবালির সঙ্গে কোলাহল মিলে এক ধরণের উৎসবমূখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় সেখানে।
প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমেদ জানান, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একমাত্র মেয়ের সিট পড়েছে মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। মেয়েকে পরীক্ষায় বসিয়ে নিজ বাসায় কিংবা কর্মস্থলে গিয়ে আবার সময়মত ফিরতে পারবেন কি না এই আশঙ্কায় চায়ের দোকানেই সময় কাটাচ্ছি।সকাল ৯ টায় বাড়ি থেকে বের হয়েছি। পরীক্ষা ছোটোদের হলেও এ নিয়ে বড়দের টেনশনই বেশি। দুর্ভোগও কম হচ্ছে না।মোটামুটি একটা যুদ্ধে নামতে হয়েছে আমাদের বাচ্চাদের জন্য। এটা সন্তানের প্রথম মেধা বিকাশের যুদ্ধ। তাই এ যুদ্ধে জয় আবশ্যসিক।
কেবল ফারুক আহমেদ নন, ১ম দিন থেকে সোমবার সকাল থেকে এমন অনেক অভিভাবকরা জানান, প্রত্যেক অভিভাবক তাদের সন্তানের পরীক্ষা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। পরীক্ষা কেমন হবে, রাস্তায় জ্যামে আটকে সময় নষ্ট হবে কি না কিংবা কেন্দ্রের পরিবেশ কেমন হবে এ নিয়ে প্রায় সব অভিভাবকের মধ্যেই শঙ্কা দেখা যায়।
ইউপি সদস্য বিপ্লব অভিভাবক জানান, প্রায় একটি মাস এ পরীক্ষা নিয়ে টেনশন বয়ে বেড়াচ্ছি। বাসা থেকে কেন্দ্র বেশ দূরে হওয়ায় বাচ্চাদের মধ্যে এক ধরনের ভয় ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি ভয় আমাদের। আমরা যারা অভিভাবক তারা বাচ্চাদেরকে একটা যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছি। প্রত্যেক অভিভাবক চায় তাদের সন্তান যেনও জিপিএ ফাইভ পায়। ভালো ফলাফলের প্রত্যাশায় প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
চাকিপশার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সহকারি শিক্ষক আবু তালেব জানান, তার স্কুল থেকে এবার পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৬৫ জন শিক্ষার্থী। বছরের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের ক্লাসের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২ মাস সমাপনী পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন তাদের জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা রয়েছিল। তার মতে, প্রাথমিক স্তরে পাবলিক পরীক্ষা বেশ ক’বছর ধরে চলে আসলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রতিযোগিতা বেড়েছে। বিশেষ করে প্রাইভেট স্কুলগুলোর শিক্ষার্থী সঙ্গে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতা চাপে পড়ছে এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
জীবনের প্রথম এতো বেশি ছাত্র-ছাত্রী দেখে শিক্ষার্থীদের অনেকেই ছিলো উচ্ছ্বসিত। যদিও বিপরীত চিত্র দেখা গেছে তাদের অভিভাবকদের মধ্যে। সেখানে কথা হয়, রাজারহাট সদর ইউপির ৯নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য বিপল্প নামের একজন অভিভাবকের সঙ্গে।
শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমাতে ২০০৯ সালে পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চালু করে সরকার। কিন্তু শুরু থেকেই কোমলমতি শিশুদের এই পাবলিক পরীক্ষা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এমনকি বিভিন্ন মহলে এ পরীক্ষা নিয়ে তুমুল বিতর্কও উঠে। এসব বিতর্ক আমলে নিয়ে এ পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে প্রাথমিক স্তর কোন শ্রেণি পর্যন্ত হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত না হওয়ায় এখনো এ পরীক্ষা উঠিয়ে দিতে পারেনি সরকার।
প্রসঙ্গত, রাজারহাট উপজেলায় ১২২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এতে এ বছর ৪ হাজার ১৮ জন সমাপনী পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে চলমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৩ হাজার ৭শত ৫৭ জন পরীক্ষার্থী