প্রচ্ছদ সারাদেশ খুলনা বিভাগ নড়াইলে বেড়িবাঁধ টেকসই নাম করে গাছ বিক্রির অভিযোগ

নড়াইলে বেড়িবাঁধ টেকসই নাম করে গাছ বিক্রির অভিযোগ

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলে বেড়িবাঁধটি টেকসই করতে রোপণ করা গাছ কেটে উজাড় করে বেচে দিচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা! নবগঙ্গা নদীর চান্দেরচর বেড়িবাঁধটি টেকসই করতে রোপণ করা হয়েছিল বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। প্রায় দুই যুগ বয়সী গাছগুলো এখন নির্বিচারে কাটা হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে পাচার হয়ে যাচ্ছে বড় বড় গাছ। স্থানীয়রা যথাসাধ্য বাধা দিলেও গাছ চুরি ঠেকাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো তত্পরতা নেই। এমনকি বেড়িবাঁধের জন্য গাছ ‘অত্যাবশ্যকীয়’ নয় বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী। আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, পাউবো সূত্রে জানা যায়, নবগঙ্গা নদীর ভাঙন ঠেকাতে বিশ শতকের আশির দশকের গোড়ার দিকে মহাজন ঘাট থেকে চান্দেরচর পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। এতে রক্ষা পায় গোবরাডাঙ্গা, তেলিডাঙ্গা, ইসলামপুর, গন্ধবাড়িয়া, ঘোষিবাড়িয়া, মহাজন ও চরকলাগাছি গ্রাম। এ বেড়িবাঁধকে টেকসই করতে সামাজিক বনায়নের আওতায় রোপণ করা হয় মেহগনি, আকাশমনি, ইউক্যালিপটাসসহ নানা প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ। সে গাছগুলো এখন কেটে বেচে দিচ্ছে একটি চক্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাজন এলাকার একটি সংঘবদ্ধ চক্র গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে উজাড় হয়ে গেছে ইসলামপুর, মহাজনসহ বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটারের তিন শতাধিত গাছ। দুই বছর ধরে চরকলাগাছি এলাকার এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধে বৃক্ষ নিধন চলছে প্রকাশ্যেই। রাতে গাছ কেটে ফেলে রাখা হচ্ছে, আর দিনের বেলা গুঁড়ি ও ডালপালা আলাদা করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, গাছ চুরি চক্রের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী, তাদের মধ্যে অনেক জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। যোগসাজশে রয়েছেন পাউবো ও বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও। বেড়িবাঁধ এলাকার লুটিয়া গ্রামের বিলকিস বেগম জানান, রাস্তা দিয়ে চলতে ফিরতেই বনের মধ্যে গাছ কাটতে দেখেন তিনি। সরকারি জায়গার গাছ সরকারি লোকেরাই কাটছেন, এমন ধারণা থেকে তারা চুপ থাকেন। সর্বশেষ কলাগাছি বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রায় ৩০টি গাছ কাটার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পাউবোকে খবর দিলে কর্মকর্তারা এসে অল্প কিছু গাছ জব্দ করেন। এ সামাজিক বনায়নের মালিকানা রয়েছে পাউবো গঠিত পানি ব্যবস্থাপনা কমিটিরও। অভিযোগ রয়েছে কমিটির লোকরা গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি বন বিভাগের পক্ষ থেকে কিছু গাছে চিহ্ন দেয়া হয়েছে। গাছকাটা চক্রে যাদের নাম এসেছে, তাদের অন্যতম এড়েন্দা এলাকার বাসিন্দা ঈসমাইল। তিনি বলেন, আমরাই তো চোরাই গাছ ধরিয়ে দিয়েছি। আরেক অভিযুক্ত মাউলী ইউনিয়নের কলাগাছি ওয়ার্ড মেম্বার, যিনি এলাকার পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, লায়েক আলী শেখ বলেন, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমিই কিছু গাছ উদ্ধার করেছি, তবে বেশির ভাগই মরা। মাউলী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত সরকারও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইসলামপুর-তেলিডাঙ্গা থেকে শত শত গাছ কেটে নিয়েছে একটি চক্র। বনখেকোরা এখন আমার নাম দিচ্ছে, এটা দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে করছে। এ ব্যাপারে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহানেওয়াজ তালুকদার, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, বেড়িবাঁধের জন্য গাছ অত্যাবশ্যকীয় নয়। আর গাছ কাটার খবর পেলে আমরা বন বিভাগকে জানাই। বন বিভাগের জনবল সংকটের কারণে গাছ চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না বলে জানান নড়াইল সামাজিক বনায়ন, নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসকে আব্দুর রশীদ। গাছ চুরির কোনো অভিযোগ পাননি, তবে ওই এলাকায় এখন থেকে টহল জোরদারের আশ্বাস দিয়েছেন নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর কবীর।