প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ নুসরাত হত্যার নেপথ্যে দুই কারণ

নুসরাত হত্যার নেপথ্যে দুই কারণ

মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি ও তার পরিবার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে ওলামাদের সম্মানহানি করেছে এবং শাহাদাত হোসেন শামীমের প্রেম প্রত্যাখ্যান, মূলত এই দুই কারণে নুসরাতকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজের মুক্তির জন্য ৪ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের কাছে নূর উদ্দিন ও শামীমরা স্মারকলিপি জমা দেন। ওইদিনই তারা জেলখানায় গিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজের সঙ্গে দেখা করে। সেখানে সিরাজ নূরকে জিজ্ঞেস করে, তোমরা আমার জন্য কী করছো। আমি জেলে মরছি আর তোমরা তামাশা দেখছো। যার কারণে আমি জেলে আছি, তার একটা ব্যবস্থা করো। হয় তাকে মামলা তুলে নিতে বলো নাহলে তার একটা ব্যবস্থা করো। প্রয়োজনে তাকে মেরে ফেলো।

পিবিআই প্রধান বলেন, এই নির্দেশের পরদিন ৫ এপ্রিল ওই মাদরাসার পশ্চিম হোস্টেলে পাঁচজন (তিনজন ছেলে আর দুজন মেয়ে) মিলে পরিকল্পনা করে কীভাবে নুসরাতকে হত্যা করা হবে। পরিকল্পনার মিটিংয়ে শাহদাত হোসেন শামীম বলে, রাফিকে পুড়িয়ে মারতে হবে। এজন্য তিনটি বোরখা ও কেরোসিন কেনার পরিকল্পনা হয়। ওই পরিকল্পনা মিটিংয়ে পুড়িয়ে মারার কারণ হিসেবে বলা হয়, অধ্যক্ষ সিরাজকে জেলে পাঠিয়ে আলেম সমাজকে হেয় করা হয়েছে এবং শাহদাত হোসেন শামীম দফায় দফায় নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখাত হয়েছে। এরপর বোরখা ও কেরোসিন কেনার জন্য একজন মেয়েকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী একজন মেয়ে তিনটি বোরখা ও কেরোসিন কিনে সকাল ৭টার আগেই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারে এনে রাখেন। পরিকল্পনার অংশ বাইরে আরো ৫ জনের কাছে জানিয়ে রাখে শাহদাত হোসেন শামীম।

৬ এপ্রিল বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে বলে শম্পা ওরফে চম্পা নামে এক ছাত্রীর দেওয়া সংবাদে ভবনের চারতলায় যান নুসরাত। সেখানে আগে থেকে লুকিয়ে ছিল শাহাদাতসহ চারজন। তারা নুসরাতকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। কিন্তু নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে ওড়না দিয়ে বেঁধে গায়ে আগুন দিয়ে তারা নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যায়।

ওই দিনই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচদিন পর ১০ এপ্রিল রাতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল রাতে অধ্যক্ষ ও পৌর কাউন্সিলরসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।