প্রচ্ছদ আর্ন্তজাতিক নরেন্দ্র মোদির বাক্স রহস্য! কী সরানো হলো হেলিকপ্টার থেকে?

নরেন্দ্র মোদির বাক্স রহস্য! কী সরানো হলো হেলিকপ্টার থেকে?

ভারতের প্রথম ধাপের লোকসভা নির্বাচনের পর হেলিকপ্টার থেকে নামানো একটি বাক্স দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনে খরচ করার জন্য এতে বিপুল পরিমাণ টাকা থাকতে পারে। অন্যদিকে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে উল্টো বিজেপি কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন।

ভারতের জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকার খবর, ভোটে নতুন বাক্স-রহস্য! অভিযোগ এবারে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে মিনিটখানেকের ছবি। হেলিকপ্টারের ডানা তখনও বনবন করে ঘুরছে। প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের কালো গাড়িগুলিও দিব্যি দাঁড়িয়ে। এসপিজি-র কর্মীরা ঘিরে রেখেছেন গোটা চত্বর। তার মধ্যেই কনভয়ের থেকে দূরে দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়ানো একটি সাদা ইনোভা। সেটি কনভয়ের অঙ্গ নয়।

প্রাথমিক দৃষ্টিতে নজর পড়ে না সে গাড়ির দিকে। যদি না হেলিকপ্টারের সামনে থেকে একটি ভারী কালো বাক্স নিয়ে তার দিকে ছুট দিতেন দু’জন। বাক্স ইনোভায় রাখতেই সে গাড়ি ছুটল তীব্র গতিতে। কী ছিল বাক্সে? কী করেই বা প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়ে বাইরের গাড়ি এল? বাক্সে কী-ই বা পাচার হল?

ঘটনাটি সদ্য গতকালই নজরে এসেছে কর্নাটক কংগ্রেসের। রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি দীনেশ গুন্ডু রাও ভিডিও’র অংশটি টুইট করে অভিযোগ করেছেন, ‘‘একটি রহস্যজনক বাক্স গতকাল চিত্রদুর্গে  প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার থেকে নেমেছে। তারপরেই সেটিকে একটি বেসরকারি গাড়িতে চাপিয়ে পাচার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের খতিয়ে দেখা উচিত, এই বাক্সে কী ছিল? গাড়িটাই বা কার?’’

রবিবার দুপুরেও দিল্লিতে এআইসিসি দফতরে এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে কংগ্রেস। সেখানে আনন্দ শর্মা অভিযোগ করেন, ‘‘ভোটের সময় কোনো মন্ত্রী, কোনো নেতা এমন কিছু নিয়ে যেতে পারেন না, যাতে অবাধ নির্বাচনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আর এটি তো খোদ প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার। যেখানে এসপিজি-র পরীক্ষা ছাড়া কিছু যাওয়ার উপায় নেই। এই বাক্সে যদি নগদ টাকা না থাকে, তা হলে সেটি এসিপিজি-ই জানাক। সে বাক্সে কী রাখা হয়েছিল, কেনই বা কনভয়ের বাইরে একটি গাড়িতে তা তুলিয়ে উধাও করা হল? কমিশনে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হয়েছে। কমিশন তদন্ত করুক।’’

ভোটের মধ্যে গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যে রাজ্যে আয়কর হানা চলছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বেছে বেছে বিরোধী নেতাদের বাড়ি-অফিসেই এই হানা হচ্ছে। অথচ বিজেপি বিপুল অর্থ খরচ করছে। তিন বছরে শুধু প্রচারেই বিজেপি ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে। নির্বাচনী বন্ডের সিংহভাগ তারা পেয়েছে। সেটি ‘স্কিম’-এর বদলে ‘স্ক্যাম’ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার থেকে বাক্সে কী পাচার হচ্ছে, তা দেশবাসীর জানার অধিকার আছে।

ঘটনাচক্রে কংগ্রেসের সংবাদ সম্মেলনের সময় বিজেপি দফতরেও চলছিল সংবাদ সম্মেলন। সেখানে ছিলেন দলের মুখপাত্র ও সাংসদ জি ভি এল নরসিংহ রাও। তাকে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি জবাব এড়িয়ে তিনি উল্টে অভিযোগ করলেন, ‘‘কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয় তুঘলক রোডে। রাহুল (কংগ্রেস সভাপতি) নিজে চুরি করে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।’’

ঘটনা হল, সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠলে ক’দিন আগেও তা নিয়ে তেড়েফুঁড়ে উঠত বিজেপি। এখন যথারীতি সরকারের আর এক ‘সূত্র’-র আবির্ভাব হল! যে ‘সূত্র’ বলল, কংগ্রেস গতকালের ছবি বললেও প্রধানমন্ত্রী চিত্রদুর্গে সভা করেছেন এক সপ্তাহ আগে। বাক্সে এসপিজির নিরাপত্তার সরঞ্জাম ছিল। সভাস্থলে মোদি পৌঁছনোর আগেই তা পাঠানোর প্রয়োজন ছিল। এসপিজিই বাক্সটি অন্য গাড়িতে নিয়ে গিয়েছে। অন্য এজেন্সিকেও তা জানানো ছিল।