প্রচ্ছদ খেলাধুলা দ্বিতীয় দিনেই উইন্ডিজের বিরুদ্বে জয়ের সুবাতাস পাচ্ছে বাংলাদেশ

দ্বিতীয় দিনেই উইন্ডিজের বিরুদ্বে জয়ের সুবাতাস পাচ্ছে বাংলাদেশ

দ্বিতীয়দিনের শেষটা দেখে অনেকেরই মধুর আফসোস, আগেই ইনিংস ঘোষণা করা উচিত ছিল বাংলাদেশের! শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে ঘূর্ণির প্রলয় নাচনে চোখে সর্ষে ফুল দেখল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

প্রথম ওভারের শেষ বলে ক্রেগ ব্রাফেট বোল্ড সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিবের যুগল ছোবলে কিয়েরন পাওয়েল, শাই হোপ, সুনীল আমব্রিস এবং রোস্টন চেজ একেএকে বোল্ড হয়ে ফিরলেন।

বাংলাদেশের স্পিন বিষে নীল হয়ে ২৯ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে সফরকারীদের যবুথবু অবস্থা। শনিবার ঢাকা টেস্টে দ্বিতীয় দিনে মিরপুরে জয়ের সুরভী ছড়িয়েই অস্তাচলে যায় সূর্য। সামনে আরও উজ্জ্বল ভোরের হাতছানি।

দিন শেষে আর উইকেট না হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭৫ করলেও সোনাঝরা দিনে জয়ের সুবাস পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। তারআগেই যে সাকিব ও লিটন দাসের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পর ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট শতকে বাংলাদেশকে রানপাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ।

সাদমান ইসলামের পর সাকিবও (৮০) সেঞ্চুরি মিসের যন্ত্রণায় পুড়েছেন। তবে ১১ ব্যাটসম্যানের সবার দুই অংক ছোঁয়ার বিরল কীর্তিতে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থামে ৫০৮ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটি দ্বিতীয় পাঁচশ’ ছাড়ানো ইনিংস।

সব মিলিয়ে এটি বাংলাদেশের নবম পাঁচশ’ ছাড়ানো স্কোর। দ্বিতীয় দিন শেষে পাঁচ উইকেট হাতে রেখে ক্যারিবীয়রা পিছিয়ে এখনও ৪৩৩ রানে। শুধু ফলো-অন এড়াতেই চাই আরও ২৩৪ রান।

বাংলাদেশকে কী দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে হবে? প্রেসবক্সে এটা অনেকবারই উচ্চারণ করলেন এক সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক। হাওয়া বদলের দিনে বাংলাদেশ যে এখন চালকের আসনে। প্রতিপক্ষের বড় স্কোরের পর ব্যাটিংয়ে নেমে ধসে যাওয়া তো বাংলাদেশের সঙ্গেই এতদিন হয়েছে।

এখন বাংলাদেশই প্রতিপক্ষকে সেই যন্ত্রণা ফিরিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময়ে উইকেট যেন ছিল ব্যাটিং সহায়ক। আর ক্যারিবীয়রা নামার পরেই মিরপুরের ২২ গজ স্পিনারদের স্বর্গ, ব্যাটসম্যানদের মরণফাঁদ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে শুধু একজন দুই অংক ছুঁতে পারেন। সবাই বোল্ড। প্রতিপক্ষের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করার নজির টেস্ট ইতিহাসে আগে ছিল মাত্র দুটি। তবে পাঁচজনই স্পিনে বোল্ড টেস্ট ইতিহাসেই এই প্রথম।

সফরকারীদের আউট হওয়ার ধরন দেখে তাদের স্পিন খেলার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও ভালো জায়গায় বোলিং করার কৃতিত্ব সাকিব-মিরাজেরই। দিন শেষে শিমরন হেটমায়ার ৩২ এবং শন ডরউইচ ১৭ রানে অপরাজিত।

দ্বিতীয়দিনের শুরুটা ঝলমলে করে তোলেন সাকিবই। আগেরদিন রক্ষাণাত্মক খেলা এ বাঁ-হাতি কাল প্রথম পাঁচ ওভারেই মারেন চারটি বাউন্ডারি। ৫৫ রান নিয়ে দিন শুরু করে নিমিষেই চলে যান ৮০ তে। কিন্তু অতি আক্রমণের খেসারত দেন আউট হয়ে।

ফেরেন আরেকটি সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ নিয়ে। তবে কেমার রোচের বলে গালিতে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে দলকে পৌঁছে দেন তিনশ’তে। এ নিয়ে মোট নয়বার আশি বা তার বেশি রান করেও সেঞ্চুরি পেলেন না সাকিব।

মাহমুদউল্লাহকে এরপর দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন লিটন দাস। মুশফিকের ইনজুরির কারণে ব্যাকআপ খেলোয়াড় হিসেবে দলে জায়গা পাওয়া লিটন করলেন ৫৪। ফেরেন রির্ভাস সুইপে বোল্ড হয়ে।

ভালো অবস্থা থেকে দলকে আরও উঁচুতে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। এ মিরপুরেই আগের টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে স্বস্তি ফিরে পেয়েছিলেন। সেখানেই ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট শতকে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে নিজের অবস্থান আরও গতিশীল করলেন। শুরুতেই ছিলেন নড়বড়ে।

সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে হয়েছিলেন নার্ভাস। তবে ধৈর্যের পরীক্ষায় উতরে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটা খেলে ফেললেন। উইকেটে ছিলেন প্রায় ছয় ঘণ্টা ১৬ মিনিট। সময়ের হিসাবে এটি তার মন্থর সেঞ্চুরি। তিন অংক ছুঁতে লাগে ২০৩ বল।

শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে থামেন ১৩৬ করে। বাংলাদেশের বড় স্কোরে ছোট ছোট অবদান রয়েছে সবারই। দলের ১১ ব্যাটসম্যানই দুই অংকের ঘরে রান করেছেন। এত রানের পরও বাংলাদেশের ইনিংসে বাউন্ডারি মাত্র ৩৭টি। এছাড়া একটি ছক্কা মেরেছিলেন লিটন দাস।

এরপর ক্যারিবীয়দের দ্রুত পাঁচ উইকেট তুলে নেয়ায় জয়টা সহজ মনে হলেও মাহমুদউল্লাহ জানালেন, ‘জয়টা সহজ হবে না। আমাদের কষ্ট করেই জিততে হবে এখানে।’