প্রচ্ছদ জাতীয় দেড়শ’ আইসিইউ ও ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন হবে এ বছরেই

দেড়শ’ আইসিইউ ও ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থাপন হবে এ বছরেই

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, রোগীদের সেবায় চলতি বছরের মধ্যে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে দেড়শ আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হবে। পাশপাশি একই সময়ে নতুন আরও দেড়শ ডায়ালাইসিস ইউনিটও স্থাপন করা হবে। যথাযথ মানের যন্ত্রপাতি স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ, হাসপাতালের সম্প্রসারণ, পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নতুন নতুন বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে রোববার সকাল ১০টায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের একজন মানুষও যেন মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার আওতার বাইরে না থাকে সেদিকে দৃষ্টি রেখে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এসময় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন-বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্মৃতি রানী ঘরামী, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক আব্দুল মালেক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপণ করেন ডা. মো. শাহদাত হোসেন মাহবুব।

জাহিদ মালেক বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা ইতিমধ্যে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে ক্যান্সর ও কিডনি হাসপাতাল নির্মানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বড় শহরগুলোতে মা ও শিশু হাসপাতাল স্থপানে কাজ শুরু করেছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৫ হাজার শয্যায় উন্নীত করনের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রামে যেন ডাক্তার থাকেন সেজন্য ডাক্তারদের আবাসন নির্মানে ৫’শ কোটি টাকার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী কাল (সোমবার) আরও সাড়েতিনশ চিকিৎসক চাকরিতে যোগদান করবে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আরও ৫ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হবে। এই নিয়োগ সম্পন্ন হলে চিকিৎসক সংকট অনেকটা কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে প্রতি বছর ৩ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ছে। দেশে বর্তমানে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে মোট ব্যয়ের ৬৭ ভাগ আউট অব পকেট ব্যয় হয়। মূলতো বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কারণে এই ব্যয় হয়ে থাকে। বেসরকারি হাসপতালগুলোর প্রতি আহবান ‘আপনার স্বাস্থ্য সেবার ব্যয় কমান, অকারণে রোগীদের দিয়ে অতিরিক্ত পরীক্ষা করাবেন না। আর ওষুধ কোম্পানির প্রতি আহবান সাধারণ রোগীদের বিষয়টি মাথায় রেখে ওষুধের দাম কম রাখুন।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশে গ্রাম পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা থাকলেও শহরে সে ব্যবস্থা নেই। তাই দেশের সব জেলা হাসপাতালগুলোতে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কর্ণার করার কথা ভাবছে সরকার। তাহলে শহরেও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এসব রোগ নির্নয় করা সম্ভব হলে এগুলো নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আমরা সেই চেষ্টা করছি। এছাড়া অসংক্রামক রোগ চিকিৎসায় দেশে ক্যান্সার, কিডনি, হৃদরোগ, ইএনটিসহ বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে।

অন্য বক্তারা বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরিকল্পনা ও বাস্তবয়নে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে শয্যা খালি পড়ে থাকে কিন্তু রোগী নেই। অন্যদিতে টারশিয়ারি পর্যায়ের রোগীর অত্যাধিক চাপ, শয্যা নেই। এছাড়া সম্পদ ব্যবহারে দক্ষতা নেই। ধনী দরিদ্র সেবা গ্রহনে অসমতা স্পষ্টত প্রতিয়মান।

অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালে দেশের সেরা সেবা প্রদানকারী ২৭টি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালকে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। এ বছর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ক্যাটাগরি থেকে ৫টি, জেলা সদর হাসপাতাল ক্যাটাগরি থেকে ৫টি, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ৩টি, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে ২টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ক্যাটাগরি থেকে ৫টি, সিভিল সার্জন ক্যাটাগরি থেকে ৫টি, বিভাগীয় পর্যায় থেকে ২টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়।

আলোচনা সভার শুরুতে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সারা দেশব্যাপী বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের কর্মসূচি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।