প্রচ্ছদ জাতীয় দেশে ১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে

দেশে ১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে

বর্তমানে দেশে ১ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ৬৪ জেলার মধ্যে ১৩টি জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে।

প্রতিবছর এই রোগে অসুস্থতা এবং মৃত্যুর প্রায় ৯৮ শতাংশ সংঘটিত হয়ে থাকে ১৩টি জেলায়। জেলাগুলো হচ্ছে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর এবং কুড়িগ্রাম। তবে সবচেয়ে বেশী প্রকোপ পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি-এই তিন জেলায়।

বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘ম্যালেরিয়া নির্মূলে বাংলাদেশ: বাস্তবতা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মুল কর্মসূচি, দৈনিক সমকাল ও ব্র্যাক যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও বেন-ম্যাল ও ডেঙ্গু কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক-এর কমিঊনিকেবল ডিজিজেস (ম্যালেরিয়া) ও ওয়াশ কর্মসূচির প্রধান ডা. মোক্তাদির কবির।

সমকাল-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ও কমিউনিকেবল ডিজিজেস কন্ট্রোল বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কমিউনেকবল ডিজিজেস সার্ভাইল্যান্স-এর মেডিক্যাল অফিসার ডা. মিয়া সেপাল, ব্র্যাকের  কমিঊনিকেবল ডিজিজেস, ওয়াশ ও ডিএমসিসি কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিরা।

অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘২০৩০ সাল নাগাদ ম্যালেরিয়া নির্মূলে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে, আমি আশা করছি ওই সময়ের মধ্যে আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। কারণ, অল্প সময়ে যদি আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করতে পারি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে অন্ধকার থেকে আলোকিত করতে পারি, তাহলে ম্যালেরিয়া কেন নির্মুল করতে পারব না।’

তিনি এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারের পাশাপাশি ব্র্যাকসহ এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা ও সামাজিক শক্তিকে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দেন।

ম্যালেরিয়া নির্মূলে তিনি মশারী ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাগুলোতে শুধু মশারী বিতরণ যথেষ্ঠ নয়, বরং তা সত্যিকার অর্থে জনগণ ব্যবহার করছে কি-না, সেদিকে আমাদের বেশি মনোযোগ দিতে হবে।’

স্বাস্থ্যখাতসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ম্যালেরিয়া নির্মূলে আরও বেশি সচেতনতা গড়ে তুলতে বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার ও প্রকাশ করার জন্য মন্ত্রী গণমাধ্যম কর্মীদের আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ‘সীমান্তে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আরো বেশি আলোচনা করতে হবে। এছাড়া দূর্গম এলাকায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের জলপথে দ্রুত আনা-নেওয়ার সুবিধার্থে নৌ অ্যাম্বুলেন্স প্রদানের জন্য মন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

ডা. মিয়া সেপাল ম্যালেরিয়া নির্মুলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি অংশীদারীত্বের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

ড. মো. আকরামুল ইসলাম ম্যালেরিয়া নির্মূলে কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এগুলো হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ম্যালেরিয়া শনাক্তকরণে গুণগত মান ঠিক রাখা, সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা জোরদার করা, চিকিৎসা সেবায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ করা ও নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রণোদনা দেওয়া, নির্বাচনী ইশতেহারে ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা ও এইডসকে গুরুত্ব দেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী দিনের কর্মসূচির পরিকল্পনা করা ।

মূল প্রবন্ধে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে সীমান্তবর্তী ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এবং আন্তঃসীমান্ত চলাচল বা পারাপারকারীর এই রোগে আক্রান্তের প্রবণতা, অতি দুর্গম এলাকাতে রোগটি স্থানান্তর হওয়া, বাহক মশা সম্পর্কিত (ধরন, স্বভাব) তথ্যের অভাব, কম প্রকোপ এলাকার জনগণের মধ্যে ম্যালেরিয়া সম্পর্কিত ভীতি কমে যাওয়া, প্রয়োজনীয় তহবিল কমে যাওয়া ইত্যাদি।

গোলটেবিল ঠৈকে বেশ কয়েকটি সুপারিশ উঠে আসে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পার্শ্ববর্তী বা সীমান্তবর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা, বেসরকারি চিকিৎসক, বিভিন্ন স্থানীয় সংগঠন ও সংস্থা এবং পার্বত্য এলাকায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করা, আন্তঃসীমান্ত পারাপারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের ম্যালেরিয়া বিষয়ে সচেতন করা, ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় আগত ভ্রমণকারী ও পর্যটকের জন্য গাইডলাইন প্রস্তুত করা, অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠির (জুম চাষী, কাঠুরিয়া, কয়লা শ্রমিক, শরণার্থী ইত্যাদি) জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, কীটতাত্ত্বিক নিরীক্ষণ ও সমন্বিত বাহক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে জোরদার করা, ম্যালেরিয়ামুক্ত জেলাসমূহে ম্যালেরিয়া জীবাণুর আবির্ভাব প্রতিরোধ করা।