প্রচ্ছদ জাতীয় দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন রাজ্যের ক্রাইফনটেইন এলাকায় জহিরুল ইসলাম হাওলাদার (৪২) নামের এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। নিহত জহিরুল শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের সাদেক আলী হাওলাদারের ছেলে। শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটার দিকে তার প্রতিবেশী আরেক এক আফ্রিকান সন্ত্রাসী তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জীবিকার প্রয়োজনে ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান জহিরুল ইসলাম। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে সে সর্বশেষ বাড়ি থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান। ক্যাপটাউন শহরের ক্রাই ফনটেইন এলাকায় তার সুপারশপের দোকান ছিল। কিছু দিন পূর্বে জহিরুল ইসলামের ভাড়া বাসার পাশের রুমে নতুন স্থানীয় ভাড়াটিয়ারা ভাড়া নেয়। এরপর ওই ভাড়াটিয়ারা জহিরুলের কাছে মদ খাওয়ার জন্য চাঁদা দাবি করে। বিষয়টি বাড়ির মালিককে জানায় জহির। এ নিয়ে শনিবার সকালে ওই ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় তারা জহিরের পেটে ছুরিকাঘাত করে। পরে জহির বাঁচার জন্য চিৎকার দিতে দিতে রাস্তায় বের হয়ে যায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাকে দৌড়ে ধরে গলায় ছুরিকাঘাত করে ফেলে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। জহিরুলের মৃত্যুর খবর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্ত্রী, এক মাত্র মেয়ে, মা ভাইবোনসহ স্বজনদের কান্নায় বাতাশ ভারি হয়ে উঠছে।

সাউথ আফ্রিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশি কমিউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা লিটন কাজী বলেন, জহিরুল একজন ভাল মানুষ ছিলেন। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। একটি ডেইরি ফার্ম ও তিনটি সুপার শপের মালিক ছিলেন। এভাবে বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনায় তাকে হত্যা করা হবে তা ভাবতেও পারিনি। সাউথ আফ্রিকায় প্রায়ই বাংলাদেশিদের উপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এ ঘটনায় সেখানকার বাংলাদেশির মধ্যে আতঙ্কে বিরাজ করছে।

জহিরুলের স্ত্রী নাছিমা ইসলাম শরীয়তপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শনিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটের সময় তার ফেসবুক প্রফাইলে স্বামী ও কন্যার সাথে তোলা হাস্যজ্জ্বল একটি ছবি আপলোট করেন। এর কিছু সময় পরই স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পান।

স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন নাছিমা। স্বজনদের সান্ত্বনাও তাকে স্বাভাবিক করতে পারছে না। তাদের এক মাত্র কন্যা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বাবার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর অঝোর ধারায় কেঁদে যাচ্ছে সে।

জহিরুলের শ্যালক শরিফুল আলম বলেন, ”হাসি-খুশিতে ভরা ছিল বোনের সংসারটি। এখন শুধুই কান্না। ভাবতেও পারছি না আমরা কি করব। বোন-ভাগ্নিকে কি বলে সান্ত্বনা দিব। জহিরুল ভাইয়ের শিগগিরই দেশে আসার কথা ছিল। হয়ত সে আসবে নিথর দেহে, প্রাণহীন হয়ে।”