প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ থানা থেকে ৩০০ গজ দূরে ক্যাসিনো, জানতো না পুলিশ!

থানা থেকে ৩০০ গজ দূরে ক্যাসিনো, জানতো না পুলিশ!


থানার পাশে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল মতিঝিলের ফকিরেরপুলে অবস্থিত ইয়াংমেনস ক্লাব অবৈধভাবে চলছিল রমরমা ক্যাসিনো ব্যবসা।

২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এ ক্লাবটি। ক্লাবের হলরুম ভর্তি জুয়াড়িরা থাকেন জুয়ায় মত্ত। সঙ্গে উন্নতমানের খাবার ও মদ-বিয়ার পরিবেশন করা হয়।

এ ক্যাসিনোটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার।

কোটি কোটি টাকার ক্যাসিনো সেটাপ, নারী-পুরুষ এনে সেগুলো পরিচালনা করাসহ নানা অবৈধ কাজ চলতো এ ইয়াংমেনস ক্লাবে।

ক্লাবটি থেকে মতিঝিল থানার দূরত্ব মাত্র ৩০০-৪০০ গজ। থানা থেকে এমন দূরত্বেই বছরের পর বছর ধরে চলছিল জুয়ার ব্যবসা।

অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এ ক্লাবটি গত ৪ থেকে ৫ বছর প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। অলৌকিক কারণে এর আগে কখনও অভিযান চালায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে, এসব কাজে সহযোগিতা করত খোদ পুলিশ। যদিও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ। এতে পুলিশের গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় থানা পুলিশ টাকার বিনিময়ে ক্লাবের কর্মকর্তাদের ক্লাব পরিচালনায় সহযোগিতা করে আসছে। এমনকি অভিযান হতে পারে এমন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে কয়েক ঘণ্টা ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধও রেখেছিলেন তারা।

থানার পাশেই এত বড় ক্যাসিনো, যেখানে ২৪ ঘণ্টা নারী-পুরুষের আনাগোনা, সঙ্গে থাকে মাদক। পুলিশের নজর এড়িয়ে এসব চলার কথা না, এভাবেই বললেন এক স্থানীয়।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ইয়াংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও টাকাসহ ১৪২ জনকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সন্ধ্যায় এ সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের পরপরই দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে বিষয়টি।

প্রশাসনের নাকের ডগায় ক্লাব এবং সামাজিক সংগঠনের আড়ালে কীভাবে আইনবহির্ভূত এসব কাজ চলছিল? এমন প্রশ্নে সরব ফেসবুক।

এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রানা বলেন, ‘যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এখানে জড়িত থাকে বা গাফিলতি থাকে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শুধু ফকিরেরপুল ইয়াংমেনস ক্লাবেই নয়- রাজধানীর গুলশান, বনানী, মতিঝিলে এমন আরও কয়েকটি ক্লাবে রমরমা ক্যাসিনো বাণিজ্য চলছে।

গতকালই মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এবং বনানী এলাকার একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে মাদক, জাল টাকা, বিপুল পরিমাণ টাকা ও ক্যাসিনো সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।

বুধবার রাতেই গুলিস্তানে পীর ইয়েমেনী মার্কেটসংলগ্ন একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। স্থানীয় কয়েকজন জানান, এ ক্যাসিনোর নেতৃত্বে আছেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট।

এদিকে পুলিশের চোখের সামনে এমন জুয়ার ব্যবসা কীভাবে করছিলেন সে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া নিজেই।

পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে মতিঝিলের ক্যাসিনো পরিচালনার বিষয়টি রাজধানীর কয়েকটি থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতেন বলে দাবি করেছেস খালেদ। তবে পুলিশের সঙ্গে ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য কোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি তিনি।

সূত্র জানায়, খালেদের ক্যাসিনোর বিষয়ে পুলিশ ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থা এবং রাজনীতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জানতেন। তাদের ‘ম্যানেজ করে’ ক্যাসিনো চালাতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, তাকে আমরা সংক্ষিপ্ত সময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো এখনই প্রকাশ করা যাবে না। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামও বলেছেন খালেদ। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করব। ঢাকায় অবৈধভাবে কোনো ক্যাসিনো থাকতে দেবে না র‍্যাব।

এদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর দায় এড়াতে পারে না মন্তব্য করে ক্যাসিনোর প্রভাব সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে বিরূপভাবে পড়বে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

অপরাধ বিশ্লেষক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অনেক কিছুই খুব কঠিন। বলাটা সহজ হলেও করাটা কঠিন। তবে যা শুরু হয়েছে তার জন্য সাধুবাদ জানাই।’