প্রচ্ছদ ধর্ম তাকওয়া অর্জনকারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ

তাকওয়া অর্জনকারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তাআলার এক বিশাল নেয়ামত।  এ মাসে সৃষ্টিকর্তা তার বান্দাহর প্রতি কত যে রহমত বর্ষণ করে থাকেন তার কোনো ইয়ত্তা নেই।  তাই সিয়াম সাধনার পাশাপাশি এ মাসে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত যাবতীয় গোনাহর কাজ থেকে দূরে থাকা।  রমজান মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের মাস।  তাই এ মাসে আমাদের বেশি বেশি করে ইবাদত করা প্রয়োজন।

রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেছেন- রোজা ধৈর্য্যের ফলস্বরূপ। আর ধৈর্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলার সুসংবাদ হল-‘ধৈর্য ধারণকারীরাই অগণিত সওয়াবের অধিকারী হবে।’ –(সূরা জুমার, ১০)

রমজানের মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া। রমজান হলো তাকওয়ার প্রশিক্ষণ।  তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ ভয় করা। এর পারিভাষিক অর্থ হলো- আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) সব আদেশ মানা ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকা। অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করতে হবে, তার আদেশ নিষেধ মানতে হবে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার চেষ্টা করতে হবে।  সব ফরজ, ওয়াজিব পালন করে হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার নাম হচ্ছে তাকওয়া।

এই তাকওয়ার লক্ষ হলো লক্ষ্য হলো রমজান ছাড়া অন্য ১১ মাস রমজানের মতো পালন করার সামর্থ্য অর্জন করা, দেহকে হারাম খাদ্য গ্রহণ ও হারাম কাজ থেকে বিরত রাখা এবং মনকে অপবিত্র চিন্তাভাবনা, হারাম কল্পনা ও পরিকল্পনা থেকে পবিত্র রাখা।  তাকওয়া অবলম্বন করলে দুনিয়া ও আখেরাতে অনেক ফায়দা আছে।

এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; আশা করা যায় যে তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে।’ রাব্বুল আলামিন আরো বলেছেন, ‘ যারা ঈমান আনে ও তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে সুসংবাদ।’ (সূরা ইউনুস : ৬৩-৬৪)

যথাযথভাবে এই তাকওয়া অর্জন করতে হলে আমাদের হালাল উপার্জন এবং হালাল খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। রমজানে সাহরি ও ইফতারকালে হালাল খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ভারসাম্যপূর্ণ পুষ্টিকর খাবারের বিষয়েও লক্ষ রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে যাতে সঠিক ও সুন্দরভাবে আমরা ইবাদত করতে পারি। শারীরিক ও মানসিকভাবে যথাযথ প্রস্তুতি না থাকলে রোজা পালন ও তারাবির নামাজ আদায়ে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

আল্লাহ সব যুগের লোকদের তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, রাব্বুল আলামিন বলেছেন- ‘আমি তোমাদের পূর্বের আহলে কিতাবদের এই উপদেশ দিয়েছিলাম আর এখন তোমাদেরকেও এই উপদেশ দিচ্ছি যে তাকওয়া অবলম্বন কর।’ (সূরা নিসা : ১৩১)

তাকওয়ার ফলে মানুষের জটিল বিষয়গুলো সহজ হয়ে যায়। এর ফলে সঠিক পথে চলতে বান্দার কোনো কষ্ট হবে না।  এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় করে কাকওয়া অনুসরণ করলে আল্লাহ বান্দার বিভিন্ন বিষয়গুলো সহজ করে দেবেন।’ (সূরা তালাক : ৪)

মানুষ তাকওয়ার ফলে শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে পারে। আল্লাহ বলেন, ১ যারা তাকওয়া অনুসরণ করে, শয়তান তাদের ক্ষতি করার জন্য স্পর্শ করলে তারা সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন তারা তাদের জন্য সঠিক ও কল্যাণকর পথ সুস্পষ্টভাবে দেখতে পায়।’ (সূরা আরাফ : ২০১)

তাকওয়া অবলম্বনকারীদের আল্লাহ সংকট থেকে উদ্ধার এবং অভাবিত রিজিক দান করেন।  কোরআনুল করীমে আল্রাহ বলেন, ‘ যে আল্লাহকে ভয় করে তাকওয়া অনুসরণ করে, আল্লাহ তাকে সংকট তেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে অভাবিত রিজিক দান করবেন।’ (সূরা তালাক : ২০)

রমজান মাসে রাব্বুল আলামিন তার বান্দার ইবাদতের প্রতিদান দিবেন অনেক বেশি। এই মাসের নেক আমল অন্য মাসের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়।  তাকওয়ার মাধ্যমে পরকালে জান্নাত, মুক্তি, সম্মান, মর্যাদা ও বহু নেয়ামত লাভের সৌভাগ্য হবে। এবিষয়ে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে- তাকওয়ার ফল হবে জান্নাত। আল্রাহ বলেন, ‘ তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুতগামী হও, যার প্রশস্ততা হলো আসমান-যমীনের সমান; এটি মোত্তাকীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।’ (সূরা আল ইমরান : ১৩৩)

কোরআান ও হাদীসে তাকওয়ার আরো বহু পুরস্কারের কথা উল্লেখ আছে।  যেহেতু এ মাসে আল্লাহ তা’আলার অধিক নৈকট্য লাভ ও সওয়াব হাসিলের মাধ্যমে পরকালীন পাথেয় অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তাই বান্দার উচিত, বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযকারে সময় কাটানো এবং তাকওয়া অর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা করা।  পবিত্র রমজান মাস এ তাকওয়া অনুশীলনের এক বাস্তব কর্মসূচি।  রাব্বুল আলামিন যেন আমাদের সবাইকে রমজানের এ মূল শিক্ষা অর্জনের  তাওফিক দেন। -আমিন।