প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ ড. কামাল হোসেন ‘রাজাকার’ ছিলেন: বিচারপতি মানিক

ড. কামাল হোসেন ‘রাজাকার’ ছিলেন: বিচারপতি মানিক

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ‘রাজাকার’ ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম আয়োজিত ‘সাম্প্রদায়িকতার সেকাল-একাল, আমাদের কথা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

এক পাকিস্তানি জেনারেলের লেখা থেকে দলিল তুলে ধরে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘সোজা কথা, কামাল হোসেন একজন রাজাকার। আর জিয়াউর রহমান নাম্বার ওয়ান রাজাকার।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এবং যারা গ্রেনেড মেরে মানুষ হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে কামাল হোসেন আঁতাত করেছেন। অবশ্য আমি এতে আশ্চর্য হইনি এজন্য যে, তিনি নিজেও তো তাদেরই একজন।’

গত আগস্টে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মাদ ফরাসউদ্দিনের দেয়া বক্তৃতা উল্লেখ করে বিচারপতি মানিক বলেন, ‘সেদিন একজন সাবেক গর্ভনর (ফরাসউদ্দিন) বলেছেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যায় কামাল হোসেন জড়িত ছিল এই মর্মে এভিডেন্স পাওয়া যাচ্ছে। কথাটা উনি কিন্তু ভুল বলেননি। কারণ, কামাল সেই সময় বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন।’

মিট্টা খা নামে পাকিস্তানি ওই জেনারেলের লেখা থেকে উদ্ধৃত করে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মামলা লড়া আইনজীবীদের একজন কামাল হোসেন মুক্তিযুদ্ধের সময় কীভাবে বন্দি হলেন, কেন তাকে পাকিস্তানে নেয়া হলো?’

এরপরই নানা কারণে আলাচিত-সমালোচিত এই বিচারপতি বলেন, ‘মিট্টা খা ২০০৮ সালে ডিফেন্স জার্নাল নামে একটি ম্যাগাজিনে লিখেছেন— ২৮ মার্চ (১৯৭১) কামাল সাহেব মিট্টা খাকে ফোন করে বলল, সবাইতে তো চলে গেছে ভারতে, আমি যেতে চাই না। আমি মুক্তিযুদ্ধ-টুদ্ধ করব না। কিন্তু, আমাকে ওই মুক্তিযোদ্ধারা মেরে ফেলবে, আমাকে দয়া করে রক্ষা করুন। মিট্টা খান তাকে ডিভিশনাল হেড কোয়ার্টারে নিয়ে আশ্রয় দিয়েছেলেন, প্রোটেকশন করেছিলেন এবং ২৯ মার্চ কামাল সাহেবকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘ওই জেনারেল আরও লিখেছেন— পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পর উনি প্রতি মাসে কামাল সাহেবের সঙ্গে দেখা করতেন। কামাল সাহেব তখন তার শ্বশুর এবং তার সম্পর্কে শ্বশুর এ কে বদি আল্লাহবক্স-খোদাবক্স, খুব নাম করা উকিল ছিলেন, তার সঙ্গে প্র্যাকটিস করতেন।’

সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের বক্তব্যের সূত্র ধরে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মানিক বলেন, ‘ফরাসউদ্দিন সাহেব বলেছেন— সেদিন, কামাল হোসেনকে ওখানে (পাকিস্তানে) রাখা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ার জন্য। কারণ, তারা সব ঠিক-ঠাক করেছিল বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেবে এবং এই ফাঁসি দেয়ার জন্য সাক্ষী দরকার ছিল। কামাল হোসেনকে সাক্ষীর জন্য রেখেছিল।’

তিনি বলেন, ‘আইএসআই অত্যন্ত করিৎকর্মা একটি গোয়েন্দা সংস্থা, যখন আবার বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হলো তখন আবার কামাল সাহেবকে সেই প্লেনে উঠিয়ে দিয়েছে। এই হলো কামাল হোসেনের ইতিহাস, উনি একজন রাজাকার।’

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের আলোচনা সভায় সাবেক সামরিক শাসক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানেরও সমালোচনা করেন বিচারপতি মানিক।

তিনি বলেন, ‘কথাটা কিন্তু আমি অনেকের কাছ থেকে শুনেছি, উনি (জিয়াউর রহমান) তো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণই করেননি। … এটা আজকে স্পষ্ট, বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল নকশা করেছিলেন জিয়াউর রহমান। … দেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর সমস্ত প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছেন, রাজকারদের মন্ত্রী বানালেন।’

মানিক আরও বলেন, ‘আমি বলব জিয়াউর রহমান এদেশের নাম্বর ওয়ান রাজাকার। এই কুখ্যাত রাজাকারের মরণোত্তর বিচারের সিস্টেম যেহেতু আইনে নেই, তাই আমার দাবি থাকবে অন্তত তদন্ত করা হোক পঁচাত্তরে ও তারপরে জিয়াউর রহমানের কী ভূমিকা ছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যায় তার কী ভূমিকা ছিল, এটা তদন্ত হলে ইতিহাসে রেকর্ড থাকবে।’

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ড. কামাল হোসেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের এই মন্ত্রী এক পর্যায়ে এসে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। ১৯৮১ সালে দলটির প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দিলে ১৯৯২ সালে কামাল হোসেন গণফোরাম নামে নতুন রাজনৈতিক দল গড়েন।

সম্প্রতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে নতুন জোট গড়েছেন।

আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবিব, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইয়াহিয়া জামান, সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ প্রমুখ।