প্রচ্ছদ সারাদেশ খুলনা বিভাগ ঝিনাইদহে এনজিওর টর্চার সেল থেকে ১৩ দিন পর যুবক উদ্ধার

ঝিনাইদহে এনজিওর টর্চার সেল থেকে ১৩ দিন পর যুবক উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ শহরের পবহাটী এলাকায় সৃজনী এনজিওর টর্চার সেল থেকে বিস্তর নির্যাতন শেষে ১৩ দিন পর যুবককে উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। অপহরণের ১৩ দিন পর আরিফ হুসাইন (২৯) নামে এক যুবককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে যুবকের চিৎকার চেচামেচি শুনে স্থানীয়রা খবর দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। মালয়েশিয়া ভিত্তিক মেডিকো গ্রুপের এরিয়া ম্যানেজার আরিফ মহেশপুর উপজেলার গৌরিনাথপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে। পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে হারুনের চাচাতো ভাই লাভলু ও কর্মচারী তৌহিদুজ্জামানকে গ্রেফতার করেছে। অরিফ অভিযোগ করেন, ১৩ দিন আটকে রেখে তার উপর অকথ্য নির্যান করা হয়েছে। তাকে শোবার জন্য বিছানা দেওয়া হয় নি। চেয়ারে বসিয়ে রেখে মারধর করা হয়েছে। আরিফের ভাষ্যমতে গত ২৬ আগষ্ট ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বর থেকে সৃজনী এনজিওর নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশিদের ছেলে তামিম তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়। সেই থেকে আরিফ পবহাটী গ্রামে সৃজনীর হেড অফিসে ৯দিন ও হারুনের বাগান বাড়িতে ৪ দিন আটক ছিলেন। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি ইমদাদুল হক শেখ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিদেশী ঋনের জন্য উদ্ধারকৃত আরিফ হুসাইন তিয়ানশি গ্রুপে কর্মরত নাসির নামে আরেক যুবকের সাথে সৃজনীর নির্বাহী পরিচালকে পরিচয় করে দেয়। সৃজনী প্রতিষ্ঠান নাসিরের কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে নাসিরকে আর খুঁজে পয়নি। এ কারণে আরিফকেই তারা আটকে রেখে সাদা স্ট্যাম্প সাক্ষর করে নিয়েছে। এ সময় আরিফকে দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলে সাদা চেকে সাক্ষর করানোর চেষ্টা করে সৃজনী কর্তৃপক্ষ। সফল ওসি আরো জানান, টাকার জন্য কারো আটকে রেখে মারধর করা অন্যায়। তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত আরিফকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ রুবিনা পারভিন জানান, এসআই পিন্টু লাল দাস নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা নির্যাতিত আরিফকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার বাম পয়ের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আরিফের বোন বুলবুলি খাতুন ও ভগ্নিপতি আরিফুল ইসলাম ছিটু অভিযোগ করেন, ১৩ দিন আটকিয়ে রেখে একটি গোপন ঘরে যে ভাবে আরিফকে নির্যাতন করা হয়েছে আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। বোন বুলবুলি খাতুনের দাবী সৃজনী থেকে ঋন নিয়ে যারা পরিশোধ করতে পারে না তাদেরকে লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে ধরে এনে এভাবেই নির্যাতন করা হয়। পবহাটী গ্রামে সৃজনী কর্তৃপক্ষের বাগান বাড়িতে টর্চার সেল রয়েছে। সেখান থেকে প্রায়ই নির্যাতিতদের কন্ঠ ভেসে আসে। আমার ভাইকেও সেখানে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে বুলবুলি অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে সৃজনীর নির্বাহী পরিচালক ড. হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, একটি প্রজেক্ট নিয়ে আরিফের সাথে লেদদেন হয়। কিন্তু সেই টাকা ফেরৎ না দেওয়ায় আমরা তাকে অফিসে ৩ দিন রেখে দিই। তাকে আটকে রেখে মারধর বা কোন নির্যাতন করা হয়নি। তাকে ১৩ দিন আটকে রাখা হয় নি বলেও তিনি দাবী করেন। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস জানান, শহরের পবহাটি এলাকায় ‘সৃজনী বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিওর নির্মাণাধীন বাড়ির ভিতর থেকে এক যুবকের চিৎকার শুনে পুলিশে খবর দেয় এলাকাবাসী। পরে পুলিশ ঘরের তালা ভেঙ্গে অপহৃত যুবক আরিফকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে। অপহৃত আরিফ হোসাইন অভিযোগ করেন, ঢাকায় নাসির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির সাথে ‘সৃজনী বাংলাদেশ’ চেয়ারম্যান ড. এম হারুন অর রশিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় সে। পরে নাসিরের মাধ্যমে কয়েকজন বিদেশির সাথে ৫ কোটি টাকা লেনদেন করে হারুন। বিদেশীরা প্রতারণার মাধ্যমে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত মাসের ২৬ তারিখে ঝিনাইদহ শহরের পোষ্ট অফিস মোড় থেকে আরিফকে তুলে নিয়ে যায় হারুনের ছেলে তামিমসহ কয়েকজন। এরপর থেকেই তাকে সৃজনী বাংলাদেশ অফিসের একটি গুদাম ঘরে ৯ দিন ও নির্মাণাধীন বাড়িতে ৪ দিন আটক রাখে। সেখানে তাকে মারধর করা হয় এবং কয়েকটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। উদ্ধারের পর তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ‘সৃজনী বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান ড. এম হারুন অর রশিদ বলেন, অভিযোগকারি আরিফের সাথে তার প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ছিল। সে কয়েকটি প্রজেক্ট পাশ করিয়ে দেবে বলে প্রতারণামুলক ভাবে টাকা নেয়। তারপর সে আর প্রজেক্ট পাশ করাতে পারেনি। পাওনা টাকা আদায়ের জন্য তাকে ডেকে আনা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, সৃজনী হারুনের ভাই তুতার নেতৃত্বে তুতা ও আলোচিত সন্ত্রাসী দাউদ ইতিপুর্বে টাকার জামিন বিষয়ে তৃতীয় পক্ষ জনৈক সাংবাদিককে পবহাটির মোড়ে একই এলাকায় আটকে অপমান-অপদস্ত, নির্যাতন ও ব্লাকমেইল করে সাদা ষ্ট্যাম্পে ও সাদা চেকে সাক্ষর করে ৫ লাখ টাকার মামলা করে। পরে সাংবাদিকের আত্বিয় জাহাঙ্গির ও ফিরোজের সহায়তায় দেড় লাখ টাকায় মিমাংশা করে। স্থানীয়রা সাংবাদিকদের জানান, সৃজনী হারুনের ভাই সহ তার ক্যাডার বাহিনী ইতিপুর্বে বেশ কয়েক জনকে এভাবে অপহরন করে একই ভাবে আটকে রেখে নির্যাতন করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে।