প্রচ্ছদ জাতীয় জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল

জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল

বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকীতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো জনতার ঢল নেমেছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ফুলে ফুলে ভরে ওঠতে শুরু করে শহীদ বেদি। আজ ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহান দিবসের কর্মসূচি।

সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। তিন বাহিনীর সু-সজ্জিত একটি চৌকসদল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় মন্ত্রী পরিষদবর্গ, বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনৈতিকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শহীদদের বেদিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরু হয়। ফুল দিতে আসা তৈরি পোশাক কারখানার মালিক রুবেল আহমেদ বলেন, দেশের সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গভীর রাত থেকেই অপেক্ষা করছি। শেষ পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানাতে পেরে বেশ ভালোই লাগছে।

ইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাষ্টার সৈয়দ আহমেদ ভুইয়া বলেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন দেশ পেয়েছি তাদের স্মরণ করতেই স্মৃতিসৌধে এসেছি। এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। এককথায় অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। তিনি বলেন, আগে স্কুল ও কলেজের শহীদ মিনারে ফুল দিতাম। আজ স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে পেরে ভালো লাগছে।

এর আগে শ্রদ্ধা জানান যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতাদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন দেশ একদিকে বিজয় দিবস পালন করছে। অন্যদিকে দেশে চলছে অত্যাচার, অনাচার, অন্যায়। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ চেয়েছিলাম, যা এখনও পাইনি। অথচ দুই সপ্তাহ পর এই নির্বাচন হওয়ার কথা।

এসময় স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, এ্যাডভোকেট আজম খান  প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিএনপির সঙ্গে যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম দলসহ সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে তমিজ উদ্দিন বলেন, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী একটি দল। আজকে আমাদের বিজয় ৪৭ বছর হতে চলেছে। এখন সময় এসেছে নতুন সমাজ ও নতুন দেশ গড়ার। এ জন্য বেগম জিয়া যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন দেশ গড়া। গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের যে কাজ আমরা করে যাচ্ছি, বিজয় দিবস সেই কাজকে আরও বেগবান করবে।এর আগে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর আগমন উপলক্ষে সাভার-আশুলিয়ার স্থানীয় নেতাকর্মীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও এর আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অপেক্ষা করেন।

এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দলের সদস্যসহ নানা বয়সের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ মহান বিজয় দিবসের বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন ও ফুল নিয়ে সৌধ প্রাঙ্গণের বাহিরে অপেক্ষমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে পর্যায়ক্রমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গণবিশ্ববিদ্যালয়, আশুলিয়া প্রেস ক্লাব, সাভার প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, জাতীয় পার্টি, যুবলীগ, যুবদল, যুব ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, কৃষক লীগ, জাসাস, মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় বসানো হয় সিসিটিভি ক্যামেরা।