প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ ‘ছেলেকে কেন নিষেধ করব’

‘ছেলেকে কেন নিষেধ করব’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর আসাদগেট এলাকায় প্রতিবাদী স্লোগান দিচ্ছিল শিক্ষার্থীরা। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন এক শিক্ষার্থীর মা। তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানা প্রজন্ম। তারা তো ন্যায়ের পথে থাকবেই। ন্যায়সংগত এই আন্দোলনে ছেলেকে আসতে নিষেধ কেন করব? আর নিষেধ করলেই ছেলে কেন শুনবে?’

 এই মা জানান, দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের স্কুলে প্রাক্‌-নির্বাচনী পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিয়েই আসাদগেটে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে চলে এসেছে সে। এই মা বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

আসাদগেট এলাকায় জড়ো হওয়া আরেক শিক্ষার্থীর মা জানান, তাঁর তিন ছেলেমেয়ে। তাঁর স্বামী কিছুতেই ছেলেমেয়েদের রাস্তায় নামতে দিতে চান না। ছেলে রাস্তায় নামবে না, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ঘর থেকে বেরিয়েছেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা। বড় মেয়ের সঙ্গে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেও বায়না ধরেছে। একদম ছোট সন্তানকে নিজের মায়ের বাসায় রেখে এসেছেন। রাস্তায় এখন একবার ছেলের কাছে যাচ্ছেন আবার মেয়ের কাছে। এই বিড়ম্বনার মধ্যেও খুশি তিনি। তাঁর ছেলেমেয়েরা ভালো কিছুর জন্য রাস্তায় নেমেছে।

তবে কয়েকজন অভিভাবক ছেলেমেয়েকে নিয়ে এলেও এই পরিস্থিতি আর চলুক তা চান না। তাঁদের বক্তব্য, ‘অনেক হয়েছে, এবার তো বাচ্চাদের থামা প্রয়োজন।’

দুপুরের দিকে আডংয়ের সামনে বহিরাগত কিছু যুবক রাস্তায় জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষার্থী বেশ ঘাবড়ে যায়। সেখানে সাদাপোশাকে দায়িত্ব পালন করা এক পুলিশ কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আমরা আছি, তোমাদের কোনো ভয় নেই।’

গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর আসাদগেট ও আড়ংয়ের সামনের সড়কে অবস্থান করা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অনেকের হাতেই ছিল প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার। এক শিক্ষার্থীর হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমি তো পিচঢালা রাস্তা নই যে তুমি আমার ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেবে’। এটি যদি আবেগের প্রকাশ হয়, তাহলে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক শিক্ষার্থীর পোস্টারের ভাষা ছিল প্রতিবাদের। তাতে লেখা, ‘খুনিরা পাবে সাজা। বিচার হবে অপরাধীদের, হোক সে মন্ত্রী-রাজা’।

এই আন্দোলনে রাজধানীবাসীর কষ্ট হচ্ছে তা শিক্ষার্থীরাও বুঝতে পারছে। একজনের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। দেশের মেরামতে কাজ চলছে।’

কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে এবং সামনে রাখা পলিথিন ব্যাগে গোলাপ রাখা ছিল। তারা জানাল, পুলিশ যদি আন্দোলনে বাধা দিতে আসে, তাহলে তাদের ফুল দেওয়া হবে।

স্লোগানে স্লোগানে ক্লান্ত হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য চিপস, বিস্কুট ও পানি নিয়ে রাস্তায় গেছেন অনেক অভিভাবক। কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন। তবে তাঁরা রাস্তায় অবস্থান না করে, ফুটপাতে বা আশপাশের কোনো দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন।

শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন নিয়ে আসাদগেট এলাকায় যানজটে আটকা পড়া মানুষের মধ্যে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ চরম বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন, আবার কেউ কেউ বলছিলেন, এ ধরনের আন্দোলনের দরকার ছিল।

 এই আন্দোলনে অংশ নিতে পেরে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন ছাত্র বলল, ‘ইমার্জেন্সি লেনকে আলাদা করলাম। মাত্র দুই দিনেই দেখিয়ে দিলাম, ইচ্ছা থাকলে সবই পারা যায়।’

আন্দোলনে নামার অপরাধে স্কুল থেকে যদি বহিষ্কার করে এ প্রশ্নের উত্তরে আরেক শিক্ষার্থীর সাফ জবাব, ‘এই কাজের জন্য বহিষ্কার বা টিসি দিলে স্কুলের প্রায় সবাইকে দিতে হবে। তখন শিক্ষকদের আবার নতুন করে ছাত্র তৈরি করে পড়াতে হবে।’

একটি কলেজের একজন নারী শিক্ষক জানান, তাঁরা এখানে এসেছেন শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। এর কারণ কলেজ খোলা, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অভিভাবকেরা তো কলেজ কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করবেন।

মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ছাত্ররা পথে, আমরা তাদের পাশে না থাকলে তো হবে না।’