প্রচ্ছদ শিক্ষাঙ্গন ছাত্রলীগ নিয়ে ক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

ছাত্রলীগ নিয়ে ক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ না পাওয়ায় বঞ্চিতদের বিক্ষোভে গতকাল ক্যাম্পাস ছিল উত্তাল। সদ্যঘোষিত ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি বাতিল করে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন তারা। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন মামলার আসামি, নিষ্ক্রিয়, বিবাহিত, অছাত্র ও চাকরিজীবীদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেওয়া হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তা না হলে গণপদত্যাগ ও অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে মধুর ক্যান্টিনে সোমবারের হামলার তদন্তের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের এক বছর পর গত সোমবার পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। ওই কমিটিতে জায়গা না পেয়ে কমিটি পুনর্বিবেচনার জন্য বিকালে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন পদবঞ্চিতরা। সেখানে হামলা করেন পদপ্রাপ্তরা। এ নিয়ে সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে সেখানেও হামলার শিকার হন পদবঞ্চিতরা। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ না পাওয়া সংগঠনটির সাবেক প্রচার সম্পাদক সাইফুদ্দিন বাবু বলেন, ‘যারা বিগত সময়ে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের একটি বৃহদাংশকে বাদ দেওয়া হয়েছে কিংবা সঠিক পদে মূল্যায়ন করা হয়নি। যারা নিষ্ক্রিয়, সাবেক চাকরিজীবী, বিবাহিত, অছাত্র, গঠনতন্ত্রের অধিক বয়সী, বিভিন্ন মামলার আসামি, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে যারা ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিষ্কৃত তাদেরই ছাত্রলীগে পদায়ন করা হয়েছে। এটা আমাদের ব্যথিত করেছে।’ সাইফুদ্দিন বাবু আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সোমবার পদবঞ্চিতরা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। সেখানেও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে নারী নেত্রীসহ বেশ কয়েকজনকে জখম করা হয়েছে। রোকেয়া হলের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশার চোখে আঠারোটি সেলাই দিতে হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাই।’ এ সময় দাবি না মানলে অনশন ও গণপদত্যাগের ঘোষণা দেন নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক নিপু তন্বী। তিনি শামসুন্নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর সদস্য।

রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বি এম লিপি আক্তার বলেন, ‘আমি রোকেয়া হলের সভাপতি এবং ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় আমাকে ছাত্রলীগের উপসম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। আমি ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে জিজ্ঞাসা করেছি, কোন ক্রাইটেরিয়ায় আপনি আমাকে ছাত্রলীগের উপসম্পাদক পদ দিয়েছেন। তিনি উত্তর দিয়েছেন, ডাকসুর গুরুত্বপূর্ণ পদে আছি বলে আমাকে এ পদ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাপারটা এমন- আপনি এমপি নির্বাচন করেছেন এবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করুন। আমার প্রশ্ন হলো, আপনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকেও কেন ডাকসু নির্বাচন করলেন।’ লিপি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তারা শোভন-রাব্বানী কমিটিতে ৮-১০ মাস রাজনীতি করেছেন, তাদের পেছন পেছন ঘুরেছেন। তাদের মেকানিজমে যারা, তাদেরই কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। আগের দুই কমিটির ত্যাগী কাউকে রাখা হয়নি।’ হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটির ব্যাপারে ছাত্রলীগ ও ডাকসুর এই নেত্রী বলেন, ‘যারা মধুর ক্যান্টিনে মারধর করেছেন তাদেরই তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এ তদন্ত কমিটি আমরা মানি না। ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সরাসরি নির্দেশেই হামলা চালানো হয়েছে।’

বিতর্কের শেষ নেই-বিবাহিতের ছড়াছড়ি : ছাত্রলীগের কমিটিতে এবার স্থান পেয়েছেন বিবাহিতরা। অভিযোগ রয়েছে- পদ পাওয়া একাধিক নেতা-নেত্রী বিয়ে করেছেন। শুধু তাই নয়, বয়স ত্রিশের বেশি এমন কয়েকজনও রয়েছেন এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। ছাত্রত্ব নেই, ব্যবসায়ীরা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর গ ধারা অনুযায়ী কোনো বিবাহিত ব্যক্তি সংগঠনের পদে আসতে পারবেন না। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ ও কমিটির বিশ্লেষণ বলছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহসভাপতি পদ পাওয়া সোহানী তিথি বর্তমানে ব্যাংকার স্বামীর সঙ্গে ঘর করছেন। এর আগেও তার বিয়ে হয়েছিল বলে জানা গেছে। উপসম্পাদক রুশি চৌধুরী ক্লোজআপ ওয়ান তারকাকে বিয়ে করেছেন। তিনি এখন রীতিমতো সংসারী। সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক পদ পাওয়া আফরিন সুলতানা লাবণী, সহসম্পাদক পদ পাওয়া আনজুমান আরা আনু ও সামিহা সরকার সুইটি বিবাহিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের সাধারণ সম্পাদক জেয়াসমিন শান্তা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নারীদের বিবাহিত হওয়া ও আন্ডারগ্রাউন্ড প্রটোকল দেওয়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে বড় পোস্ট পাওয়ার মূলমন্ত্র।’ কমিটিতে সহসভাপতি পদ পেয়েছেন সাদিক খান। তার স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে এর প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন হয়েছিল। ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন সহসভাপতি তানজিল ভূঁইয়া তানভীর। তার বয়সও ত্রিশের ঊর্ধ্বে। ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর কোটায় তানভীর পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক ছাত্রলীগ কর্মী। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে আল নাহিয়ান খান জয় ও তৌফিকুল হাসান সাগরের বিরুদ্ধে। পরীক্ষায় নকলের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন সহসভাপতি প্রদীপ চৌধুরী। সৃজন ভূঁইয়া সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি শোভনের বন্ধু হিসেবে পদ পেয়েছেন তিনি।