প্রচ্ছদ আইন আদালত চারবার পেছাল খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি

চারবার পেছাল খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে আগুনে পুড়িয়ে আটজন হত্যার ঘটনায় জামিন শুনানি আবারও পেছাল। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি শুনানির নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ মো. আলী আকবর নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন। একই সঙ্গে মামলার অভিযোগ গঠনের দিনও ওই তারিখে নির্ধারণ করেন। এ নিয়ে পরপর চারবার শুনানি পেছাল।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী মো. কাইমুল হক বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সময় চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে মামলার জামিন শুনানি ও অভিযোগ গঠনের তারিখ পেছানো হলো। এ নিয়ে চারবার পেছানো হলো শুনানি। শুনানির নতুন তারিখ আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ধার্য করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত কয়েক দফা তারিখ দিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করেন। পরে আমরা জজকোর্টে পুনরায় জামিনের আবেদন করেছি। গত বছরের ১১ নভেম্বর জেলা ও দায়রা জজ ছুটিতে ছিলেন। পরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক আবদুর রহিম ওই মামলার জামিনের শুনানি করেন। তখন রাষ্ট্রপক্ষ সময় চাওয়ায় বিচারক ২৫ নভেম্বর শুনানির নতুন তারিখ ধার্য করেন। তখন শুনানি করতে গেলে জেলা ও দায়রা জজ কোনো শুনানি না করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেন। এদিনও শুনানি হয়নি। পরে ১৬ জানুয়ারি তারিখ নিধারণ করা হয়। এদিনও শুনানি ও অভিযোগ গঠন হয়নি।’

খালেদা জিয়া বর্তমানে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে রাজধানীর নাজিমুদ্দীন রোডের পুরাতন কারাগারে আছেন।

২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলা হলে আটজন যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত ও ২৭ জন আহত হন। এ ঘটনায় পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সাংসদ সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরসহ ৫৬ জন বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। ৫ ফেব্রুয়ারি মো. আলমগীর, ২৫ ফেব্রুয়ারি জাকির হোসেন ও ২৬ ফেব্রুয়ারি মো. মোতালেব নামের তিন ব্যক্তি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন। এতে তাঁরা খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করেননি। পরে ২০১৫ সালের ২ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর আরেকটি সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দেওয়া হয়। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার মারা যাওয়ায় তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। উভয় অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়ার নাম ৫১ নম্বরে আছে। পরে ২০১৮ সালের ২৮ মে হাই কোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ছয় মাসের জামিন দেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ মে চেম্বার বিচারপতি জামিনের আদেশ স্থগিত করেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টকে পূর্ণাঙ্গ শুনানি করার নির্দেশ দেন। ১১ জুন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শত্তকত হোসেন ও আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিষয়টি নিম্ন আদালতে নিষ্পত্তির জন্য আদেশ দেন। ১২ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা ৫ নম্বর আমলি আদালতে এই মামলার জামিনের শুনানি হয়। পরে আদালতের বিচারক ২০ সেপ্টেম্বর নতুন তারিখ ধার্য করেন। ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন পুনরায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ সময় চেয়ে আবেদন করে। এরপর আদালতের বিচারক শুনানির নতুন তারিখ ৩ অক্টোবর ধার্য করেন। ৩ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিপ্লব দেবনাথ জামিন নামঞ্জুর করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়। ১৫ অক্টোবর প্রথম দফা জামিনের শুনানি হয়। এতে আদালত ১১ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন। এরপর গত ২৫ নভেম্বর কোনো শুনানি হয়নি। ৭ জানুয়ারি শুনানি শেষে বুধবার (১৬ জানুয়ারি) তারিখ নির্ধারণ করা হয়। আবার নতুন করে তারিখ ঘোষণা করা হয় আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি।

আইনজীবী মো. কাইমুল হক বলেন, বাসে আগুনে পুড়িয়ে আটজন মারা যাওয়ার এই মামলায় খালেদা জিয়ার নাম এজাহারে তথা মামলার প্রাথমিক বিবরণীতে নেই। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন ব্যক্তি ১৬৪ ধারায় আদালতে খালেদা জিয়ার নাম বলেননি। এরপরেও তাঁকে এই মামলায় রাজনৈতিকভাবে জড়ানো হয়।