প্রচ্ছদ অর্থনীতি গ্যাসের দাম ১৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ

গ্যাসের দাম ১৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ

তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের শুরুতেই ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৪৩ শতাংশ বাড়তে পারে। তবে গৃহস্থালি এবং বাণিজ্যিক ভোক্তাদের ক্ষেত্রে এবার গ্যাসের দাম বাড়ছে না।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের গণশুনানিতে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে কমিশন গঠিত সাত সদস্যের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি তাদের প্রতিবেদনে গ্যাসের গ্রাহকপর্যায়ে গড়ে ১৪৩ ভাগ দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করে।

শুনানিতে জানানো হয়, তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গড়ে শুধুমাত্র গ্যাসের দাম ৭৫ ভাগ বাড়ানোর জন্য গত ২০ মার্চ কমিশনের কাছে একটি আবেদন করে। এর সঙ্গে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল, সঞ্চালন ব্যয় ও বিতরণ ব্যয় ধরে এই দাম বাড়ানোর হার নির্ধারণ করেছে কমিশনের কারিগরি কমিটি।

কমিশন বলছে, এখন নির্দিষ্ট শ্রেণির গ্রাহকরা গড়ে ৩.৪৪৯৩ টাকায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনে থাকে। সব ধরনের তহবিল এবং চার্জ ধরে এই গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারে ১১.৭৪৪৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তিতাস। কারিগরি কমিটি মনে করে, এই দর ৮.৪০৫২ টাকা রাখলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তিতাসের কোনও লোকসান হবে না।

কেবল এলএনজি আমদানির কারণেই দেশে গ্যাসের দাম বাড়াতে হচ্ছে বলে কারিগরি কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। এখন দেশে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১.৫৭৮৭ টাকা। আর দৈনিক গড়ে উৎপাদিত দুই হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সঙ্গে প্রতিদিন আমদানি করা এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির ফলে মিশ্রিত গ্যাসের দাম বাড়ছে। তিতাস তার প্রস্তাবে অন্যসব তহবিল এবং চার্জ ব্যতিরেকেই শুধু গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ১.৫৭৮৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০.৩৭ টাকা করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কারিগরি কমিটি বলছে—এই দাম বৃদ্ধি করা যেতে পারে ৬.৮২ টাকা। তাতেও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরিমাণও দাঁড়াবে ৩২২ ভাগ।

শুনানিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘তিতাস প্রতিবছর লাভ হোক না হোক, ২৫০ কোটি টাকা সরকার এবং শেয়ার মালিকদের দিচ্ছে। এজন্য তাদের অতিরিক্ত অর্থ তুলতে হচ্ছে।’ তিনি বাপেক্সকে দেয়া তিতাসের তহবিলের দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এই ঋণের টাকার মধ্যে ২৩০ কোটি টাকা ইতিমধ্যে তছরুপ হয়েছে।’ সাবেক জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিনের বাজে সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা গেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিতাস এই টাকা ফেরত পাবে কিনা জানতে চাইলে তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বাপেক্সকে এই অর্থ দিয়েছে। বাপেক্স তাদের অর্থ ফেরত দেবে।

শুনানিতে ঢাবির অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘গত ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে একটি সংকট তৈরি করা হয়েছে। আর এখন সেই সংকটের মাশুল দিতে হচ্ছে পুরো জাতিকে।’

তিনি বলেন, ‘গড়ে প্রতিবছর একটি কূপও খনন করা হয়নি। সিলেট ছাড়া অন্য কোনও এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে খুব একটা কাজ না হওয়ায় এখন এলএনজি আনতে হচ্ছে, যা দেশের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।’

শুনানিতে বুয়েটের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘এলএনজি আসছে এই খবরেই গৃহস্থালির গ্রাহকদের ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হচ্ছে। আবার একটি মহল এ বিষয়ে তৎপর হয়েছে।’

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মীর মশিউর রহমান বলেন, ‘নতুন করে কাউকে ডিমান্ড নোট দেয়া হয়নি। আগে যাদের ডিমান্ট নোট ইস্যু করা হয়েছে, গৃহস্থালিতে সংযোগ দিলে তাদেরই আগে দেয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে সরকারকে ঘোষণা দিতে হবে। এখনও গৃহস্থালিতে গ্যাস দেয়ার বিষয়ে সরকারের কোনও নির্দেশনা পায়নি তিতাস।’

শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য রহমান মুর্শেদ, মাহমুদুউল হক ভূঁইয়া, মো. আব্দুল আজিজ খান ও মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, এবার বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা, সিএনজি, ক্যাপটিভ পাওয়ার (শিল্প কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র), শিল্প গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।