প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ খালেদা জিয়া নারী জাতির জন্য কলঙ্ক: প্রধানমন্ত্রী

খালেদা জিয়া নারী জাতির জন্য কলঙ্ক: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, একজন নারী মানে একজন মা। সেই নারী হয়ে এতিমের টাকা মেরে খাওয়া-এটা চিন্তাই করা যায় না। এটা সমস্ত নারীর জন্য কলঙ্ক। খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে কোর্টের রায়ে জেলে আছেন। একজন নারী হয়ে দুর্নীতির দায়ে তার সাজা হয়েছে। মামলাটা আমরা করিনি। রাজনৈতিক কারণে মামলা হলে ২০১৪-১৫ সালেই তাকে গ্রেফতার করতে পারতাম।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মহিলা এমপি নুরজাহান বেগমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, মামলাটি প্রায় ১০ বছর চলেছে। বিএনপি’র এতো জাঁদরেল জাঁদরেল আইনজীবী কেউই আদালতে তাঁকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলো না। এতেই প্রমাণিত হয় তিনি অপরাধী। আর বিএনপি নেতারাও সেটা জানতেন বলেই মামলার রায়ের আগেই দলটির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা সংশোধন করলো, নতুবা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দুর্নীতিবাজ, অপরাধী ও দন্ডিতদের নেতা হওয়ার সুযোগ রাখা হলো কেন?  এতে এটাই প্রমাণ হয় তিনি অপরাধী। এটা নারী জাতির জন্য লজ্জার। নারী জাতির জন্য কলঙ্কের।

নারীর ক্ষমতায়নসহ যেকোনো উন্নয়নে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা থাকা দরকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক সেটাই আমরা চাই। কারণ গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে, দেশে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ থাকে তবে দেশ যে সবদিক থেকে এগিয়ে যায়, উন্নত-সমৃদ্ধ হয়- আমরা তা প্রমাণ করেছি। গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে দেশ উন্নত হয় না, বরং মানুষ বঞ্চিত ও নির্যাতনের শিকার হয় তাও বার বার এ দেশে প্রমাণ হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশ যেভাবে সুষ্ঠভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমাদের মেয়েরাই লাভবান হবে। আমি বলবো, নারীর ক্ষমতায়ন, সুরক্ষা, উন্নয়ন সবকিছুই নির্ভর করে সুষ্ঠু নির্বাচন; যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতা ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা না থাকলে নারীরা নির্যাতিত হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর মতো নারীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়, পাশবিক নির্যাতন চালায়। ৬ বছরের ছোট শিশুকে পর্যন্ত গণধর্ষণ করে। দেশের এমন কোন স্থান ছিল না যেখানে নির্যাতন হয়নি। যে কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা ভোট পায়নি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আন্দোলন ও নির্বাচন বানচালের নামে তারা নির্বিচারে নারীসহ দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সারাদেশে নাশকতা চালিয়েছে। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতা তখনই সম্ভব যখন দেশে গণতান্ত্রিক সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে।

আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ভূমিকা অসামান্য:

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী ১৪টি আন্তর্জাতিক কনভেনশনের প্রত্যেকটিতেই বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা সর্বদা কাজ করে চলেছি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবদান আজ সর্বস্বীকৃত। একদিকে আজ বাংলাদেশ যেমন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, অন্যদিকে তেমনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় রেখেছে অসামান্য ভ‚মিকা। যার ফলে অর্জন করেছে অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মানজনক স্বীকৃতি। শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ব শান্তির জন্য গৃহীত যে কোন উদ্যোগে বাংলাদেশের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণ বজায় থাকবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে আমরা মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্তে¡ও আমাদের এই উদারতা বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা তথা শান্তি বজায় রাখতে অসাধারণ ভ‚মিকা রেখেছে, যা আজ সর্বজনবিদিত।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ 
তরিকত ফেডারেশনের সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ইতোপূর্বে জঙ্গী/সন্ত্রাসী/নাশকতামূলক/ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কর্মকান্ড ও গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম গঠন করে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, মাদকবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত মাদকদ্রব্য ১৫ হাজার ৩৩৩টি মামলা হয়েছে। ২০ হাজার ৭৬৭ জন আসামীকে গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১ হাজার ২৮৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রেরণের পরিকল্পনা 
মহিলা এমপি বেগম নাসিমা ফেরদৌসীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে নিজেদের অবস্থানকে সমুন্নত রাখতে এর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর আয়ুস্কাল শেষ হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ মহাকাশে প্রেরণ করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রবেশ করলো এক এলিট ক্লাবে। নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক দেশগুলোর এই ক্লাবে বাংলাদেশ ৫৭তম সদস্য।