প্রচ্ছদ আইন আদালত খালেদা জিয়ার মামলার পরবর্তী শুনানি ২৪ সেপ্টেম্বর

খালেদা জিয়ার মামলার পরবর্তী শুনানি ২৪ সেপ্টেম্বর

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম চলবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ চতুর্থ দিনের শুনানি শেষে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলার কাজ মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী শুনানি হবে ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর।

একই সঙ্গে এ মামলায় আসামি খালেদা জিয়া, জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং মনিরুল ইসলাম খানের জামিন সেই সময় পর্যন্ত বহাল রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এই আদেশ দেন।

এর আগে আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া চ্যারিটেবল মামলা চালানো যাবে কি না, শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাষ্ট্রপক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও আমিনুল ইসলাম শুনানিতে অংশ নেন।

শুনানি শেষে আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০-এর এ ধারা অনুযায়ী আসামির অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম চলবে বলে আদেশ দেন।

এ ছাড়া খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদনের ব্যাপারে আদালত বলেছেন, জেল কোড অনুযায়ী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানি উপলক্ষে আজ সকাল থেকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ দিন কারাগার চত্বরের যে কক্ষে বিচারকাজ চলছে, দুপুরে সেই ভবনের ছাদে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই কনস্টেবল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়। অসুস্থ থাকায় আজও শুনানিতে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামি হলেন—খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে মামলার কার্যক্রম খালেদা জিয়া যেখানে বন্দি আছেন, সেই কারাগারের প্রশাসনিক ভবনে আদালত বসানোর তথ্য জানানো হয়। পরের দিন ৫ সেপ্টেম্বর মামলার কার্যক্রমে আইনজীবীরা না গেলেও খালেদা জিয়া হুইলচেয়ারে করে আদালতে আসেন।

সেদিন আদালতে ৩০ মিনিটের মতো ছিলেন খালেদা জিয়া। বিচারকের সামনে একটি হুইলচেয়ারে তিনি বসে থাকেন। এ সময় তাঁকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তাঁর হাত-পা এবং মাথা কাঁপছিল। তাঁর সঙ্গে গৃহকর্মী ফাতেমা ছিলেন। ফাতেমার হাতে ছিল একটি ছোট ব্যাগ।

এ সময় খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, ‘জজ সাহেবের কাছে কোনো কথা বা নিবেদন করা যায় না। উনি তারিখ দিয়ে উঠে চলে যান। আমাদের কারো কথা শুনেন না। সরকারের হুকুমে এবং নির্দেশে তিনি সব কিছু পরিচালনা করছেন। আমার পায়ে ব্যথা। ডাক্তার আমাকে পা সব সময় উঁচু করে রাখতে বলেছেন। হাতেও প্রচণ্ড ব্যথা। আমাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে। আমি খুবই অসুস্থ। আমি ঘন ঘন কোনো হাজিরা দিতে পারব না। রায় তো লেখাই আছে। আমার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের যা ইচ্ছা রায় দেন, যত খুশি সাজা দিয়ে দেন।’

এরপর আর আদালতে শুনানিতে হাজির হতে পারেননি খালেদা জিয়া।

এরই মধ্যে আদালতের অনুমতি নিয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে কারাগারে খালেদা জিয়ার কক্ষের সামনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন তাঁর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার।

কারাগার থেকে বের হওয়ার পর মাসুদ আহমেদ তালুকদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, খালেদা জিয়া আদালতে বসে বিচার কাজ শ্রবণ করার মতো সুস্থ নন বলেই গত দুটি তারিখে কারাগারে স্থাপিত আদালতে আসেননি। এই আদালতের ওপর তাঁর আস্থা আছে। কিন্তু আদালতে হাজির হওয়ার মতো শারীরিক সুস্থতা তাঁর নেই। খালেদা জিয়া দুদিন আগেও কারাকক্ষের বাথরুমে পড়ে গেছেন। সুস্থ না হয়ে আদালতে কী করে যাবেন বলে প্রশ্ন রেখেছেন খালেদা জিয়া। সুস্থ হওয়া সাপেক্ষে তিনি আদালতে আসবেন বলে জানিয়েছেন।

মাসুদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমি গত দুটি তারিখে অসুস্থ ছিলাম। এ কারণে আদালতে যেতে পারিনি। জেল কর্তৃপক্ষ আমার বিষয়ে মিথ্যা কথা বলেছে। আমার ছেলে ও মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতেও না খেয়ে আমি সারা দিন আদালতে উপস্থিত ছিলাম। আমি কখনো আদালতের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করিনি। আমি নিজে হাঁটতে পারি না। খাওয়া-দাওয়া করতে পারি না। এ মুহূর্তে আমার জরুরি দরকার হলো চিকিৎসা। আমি সুস্থ হয়ে আদালতে যাব এবং মামলা মোকাবিলা করব।’