প্রচ্ছদ রাজনীতি ঐক্যফ্রন্টের দাবি প্রত্যাখ্যান আওয়ামী লীগের

ঐক্যফ্রন্টের দাবি প্রত্যাখ্যান আওয়ামী লীগের

নির্বাচন পিছিয়ে সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার আদলে নির্বাচন আয়োজনের দাবি করেছে ঐক্যফ্রন্ট। তবে দাবিটিকে অসংবিধানিক অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বুধবার গণভবনে প্রায় ৩ ঘণ্টা বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এ কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১০ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচনকালীন উপদেষ্টা পরিষদের প্রস্তাব দিয়েছে। এটা সংবিধানসম্মত না। আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না। আমাদের নেত্রীও তাদের এটা পরিষ্কার বলে দিয়েছেন।’

‘এটা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার একটা বাহানা। এই পিছিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ফাঁক ফোকর হয়ত খুলে দেওয়া হচ্ছে। যেখান দিয়ে তৃতীয় কোনো অপশক্তি এসে ওয়ান ইলেভেনের মত সেই অনভিপ্রেত অস্বাভাবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে, আমরা সবাই মনে করছি।’

এর আগে বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। বৈঠক শেষ করে জোটটির কোনো নেতা মন্তব্য করেননি। রাজধানীর মতিঝিলে ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করবেন তারা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার বেশিরভাগই মেনে নিতে আমাদের দলনেতা শেখ হাসিনা সম্মত হয়েছেন। আমরা মনে করি, সংলাপে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বাকিটা ওনারা (ঐক্যফ্রন্ট) বলতে পারবেন।’

‘ভবিষ্যতে আর আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। ডায়ালগ শেষ, আলোচনা চলবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপ নিয়ে আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিবেন’, বলেন ওবায়দুল কাদের।

অন্যান্য দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের বেশিরভাগ দাবিই মেনে নিতে আমাদের আপত্তি নেই। সত্যিকারের রাজবন্দিদের মুক্তির বিষয়ে আইনমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বিষয়ে আমরা সম্মত। আমাদের মন্ত্রীরা বাড়তি কোনো সরকারি সুবিধা-সুবিধা নেবেন না। তাদের কোনো ক্ষমতা থাকবে না। অন্যদের মতোই সুবিধা ভোগ করবেন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে তারা যে কথা বলেছেন, সেটা পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই নেই। তবে আমরা বলেছি, সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে।’

সংলাপ শেষে বেরিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংবিধান পরিপন্থি ও সাংঘর্ষিক কিছু বক্তব্য তারা নিয়ে এসেছে, যেটা গ্রহণযোগ্য না। সংলাপ এখানে শেষ। শিডিউল ঘোষণার পর তারা যদি কোনো ব্যাপারে আবার বসতে চান, আপত্তি নেই।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘দুই পক্ষই নিজেদের দাবিতে অনড়। কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। ঐক্যফ্রন্ট আবারও সংলাপের দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

এর আগে গণভবনে বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে বসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১১ নেতা।

সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন ড. কামাল হোসেন। দ্বিতীয় দফায় এ সংলাপ চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

এদিন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ চার দফা দাবি উত্থাপন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো-সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং ১০ সদস্যের নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার।

সংলাপে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১১ জন এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের ১১ জন অংশ নেন। ১৪ দলের প্রতিনিধিদলে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, স ম রেজাউল করিম, হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন সংলাপে অংশ নেন।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টু, গণফোরামের কার্যকরি সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, গত ১ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ২০ সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ করে।