প্রচ্ছদ খেলাধুলা এ কী ব্যাটিং করলেন হোল্ডার!

এ কী ব্যাটিং করলেন হোল্ডার!

টেস্ট ক্রিকেটের নাটকীয়তার সঙ্গে কোনো সংস্করণেরই তুলনা চলে না। ব্রিজটাউন টেস্টের কথাই ধরুন। দ্বিতীয় দিনে মোট ১৮ উইকেটের পতন হলো। ইংল্যান্ড অলআউট হলো ৭৭ রানে। কিন্তু পরদিন? কোনো উইকেটই পড়ল না!

ইংল্যান্ডের ৭৭ রানের কাটা ঘায়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬ উইকেটে ৪১৫ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা তো নুনের ছিটাই! আর তাতে স্বাগতিকদের দুই ইনিংস মিলিয়ে ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের লক্ষ্যটা আসলে পাহাড়সমান না বলে আকাশের সমান উঁচু বলাই ভালো। জিততে হলে ইংল্যান্ডকে করতে হবে ৬২৮ রান।

কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৬ রান তুলে কাল তৃতীয় দিন শেষ করেছে ইংল্যান্ড। দুই দিন হাতে রেখে ইংল্যান্ড এখনো ৫৭২ রান পিছিয়ে। এই টেস্টের ভাগ্য কোন পথে যাচ্ছে তা কিন্তু পরিষ্কার। জয়ের পাল্লা স্বাগতিকদের দিকেই বেশি ভারি। আর ইংল্যান্ড? তাঁদের জন্য ব্যাপারটা অনেকটাই পরিখা-যুদ্ধের মতো। মাথা বাঁচিয়ে লড়তে হবে বাকি দুটি দিন। নইলে হার নিশ্চিত।

আসলে ইংল্যান্ড এমন বেকায়দায় পড়েছে কেনসিংটন ওভালের ঘরের ছেলের জন্য। জ্যাসন হোল্ডার। এই সিরিজ শুরুর আগে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের বুক চিতিয়ে লড়াইয়ের কথা বলেছিলেন হোল্ডার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে এক শিমরন হেটমায়ার ছাড়া কেউ সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি। দ্বিতীয় ইনিংসেও ধুঁকছিল দল। ৬ উইকেটে ১২৭ রান তুলে দ্বিতীয় দিন পার করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হোল্ডার ৭ রানে আর শেন ডরওরিচ ছিলেন ২৭ রানে অপরাজিত। কেউ সেভাবে দাঁড়াতে না পারায় ক্যারিবীয় অধিনায়ক হোল্ডার কাল নিজেই কাজে নেমে পড়েন। এমন মনোসংযোগ আর দ্যূতিময় স্ট্রোকের মিশেলে দুজন ব্যাট করেছেন যে তৃতীয় দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর কোনো উইকেট হারায়নি।

সপ্তম উইকেটে টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৯৫* রানের জুটি গড়েন হোল্ডার-ডওরিচ। তাঁদের অপরাজিত এই জুটিতে ভর করে ৮৯ বছর আগের এক কীর্তিও নতুন করে লেখায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৩০ সালে জর্জটাউন টেস্টে এই ইংল্যান্ডকেই ৬১৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাঁদের টেস্ট ইতিহাসে এত দিন এটাই ছিল প্রতিপক্ষ দলকে দেওয়া সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য। কাল সেই রেকর্ডটি নতুন করে লিখিয়েছেন হোল্ডার-ডওরিচ। আর এই পথে হোল্ডার তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি—২০২। অন্য প্রান্তে তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে সেঞ্চুরি (১১৬) তুলে নেন ডওরিচ।

কাল তৃতীয় দিনে প্রথম ঘণ্টায় বেশ সাবধানি ব্যাটিং করেছেন দুজন। এরপর বাজে বল পেলে আর ছাড়েননি। হোল্ডার ফিফটি তুলেছেন ৬০ বলে, এরপর সেঞ্চুরি তুলে নিতে খেলেছেন আরও ৩৯ বল। দেড় শ রানের কোটায় পৌঁছাতে একটু সময় নিয়েছেন হোল্ডার। এই পথ পর্যন্ত আসতে তিনি খেলেছেন আরও ৮৬ বল। তবে ‘ডাবল’ তুলে নেওয়ার বাকি পথটুকু বেশ দ্রুতই টপকে গেছেন তিনি। দেড় শ থেকে দুই শ তুলতে তাঁর লেগেছে মাত্র ৪৪ বল। সব মিলিয়ে ২২৯ বলে ২০০ রান করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় দ্রুততম ‘ডাবল’ তুলে নেন হোল্ডার। শুধু কী তাই? দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় কিংবা তার পরে ব্যাট করতে নেমে এর আগে ‘ডাবল’ সেঞ্চুরি করেছিলেন শুধু একজনই—স্যার ডন ব্র্যাডম্যান!

হোল্ডার কাল ইতিহাসের এই খেরোখাতায় ব্র্যাডম্যানেরই পাশে বসলেন। ১৯৩৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাতে ব্যাট করতে নেমে ২৭০ রান করেছিলেন ডন। হোল্ডার-কীর্তির এখানেই শেষ নয়। এই ইনিংসে ৮টি ছক্কা মেরেছেন হোল্ডার—যা টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানের ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা। আটে কিংবা তার নিচে ব্যাট করতে নেমে হোল্ডারের আগে ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন শুধু দুজন—ওয়াসিম আকরাম (২৫৭, জিম্বাবুয়ে, ১৯৯৬) ও ইমতিয়াজ আহমেদ (২০৯, নিউজিল্যান্ড, ১৯৫৫)।

ক্যারিবীয় অধিনায়ক কাল ডাবল সেঞ্চুরি তুলে দারুণ এক তালিকাতেও জায়গা করে নিলেন। টেস্ট ইতিহাসে ডাবল সেঞ্চুরি আর ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন তিন অধিনায়কের—ইমরান খান, অ্যালান বোর্ডার ও হোল্ডার! ক্যারিবীয় অধিনায়ককে মূলত পেসার হিসেবে সবাই জানলেও তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান—২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাত টেস্টে হোল্ডার ৫৪৩ রান করেছেন ৫৪. ৩০ গড়ে, যা একই সময়ে ১৪ টেস্ট খেলা বিরাট কোহলির ব্যাটিং গড়ের চেয়ে বেশি!