প্রচ্ছদ সারাদেশ ঢাকা বিভাগ ইলিশ কিনতে পদ্মার চরে মানুষের ভিড়

ইলিশ কিনতে পদ্মার চরে মানুষের ভিড়

সরকারি নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ফরিদপুরের সদরপুরে অব্যাহত রয়েছে মা ইলিশ নিধন। পদ্মা-আড়িয়াল খাঁয় অসাধু জেলেরা প্রতিদিন সুযোগ পেলেই অবৈধ কারেন্ট জাল-নৌকা নিয়ে নেমে পড়ছেন। ধরা পড়ছে শত শত মা ইলিশ।

প্রশাসনের নজর এড়িয়ে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে মাছ শিকার করছে জেলেরা। এরপর ঢেউখালী ইউনিয়নের নবাব মোল্যার ঘাট, চরনাছিরপুর ইউনিয়নের মোল্যা কান্দি, কাচিকাটা বাজার, জঙ্গীকান্দি, চুঙ্গা কান্দি, হাওলাদার কান্দি বাজার, দিয়ারা নারিকেলবাড়ীয়া ইউনিয়নের নন্দলালপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বসছে ইলিশের অস্থায়ী হাট। এসব হাটে ৩শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকায় মিলছে এক কেজি ইলিশ।

এদিকে জেলা প্রশাসন ও সদরপুর উপজেলা প্রশাসন নদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রাখলেও এক শ্রেণির অসাধু জেলেকে ইলিশ নিধন থেকে বিরত রাখতে পারছে না।

গত কয়েকদিনে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পূরবী গোলদার, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজল চন্দ্র শীল, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজ সাহিন খসরু, হাসান মো. হাফিজুর রহমান ও মো. বায়েজিদুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দেড় শতাধিক জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ সময় কয়েক লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং প্রায় ১০ মণ ইলিশ বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করা হয়।

মো. এখলাস হোসেন নামে এক জেলে বলেন, নদীতে অভিযান আছে, তারা চলে গেলেই নদীতে জাল ফেলি। নদীতে বেশ কিছু ট্রলার আসে যারা নৌকা থেকে মাছ ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

নবাব মোল্যার ঘাট এলাকার মাছ ক্রেতা আবু হোসেন জানান, এখন সস্তায় মাছ কিনতে পারি, কিন্তু খুব সতর্ক হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। জেল জরিমানার ভয় রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নদীপাড়ের একাধিক বাসিন্দা বলেন, অভিযান কম থাকার কারণে জেলেরা নদীতে নামতে পারছেন। সেই সঙ্গে অভিযানের খবর আগেই জেলেদের কাছে চলে আসায় অনেকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

চার উপজেলা কেন্দ্রিক পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদ। সদরপুর, চরভদ্রাসন, দোহার ও শিবচর সীমানা। নদীতে পৃথক পৃথক অভিযান চললেও একাধারে টহল দল না থাকার সুযোগে জেলেরা ইলিশ শিকারের সুযোগ পাচ্ছেন। তাছাড়া নদী পাড় এলাকায় জেলেদের সোর্স আছে। অভিযান শুরুর আগেই খবর পৌঁছে যাওয়ায় তারা দ্রুত পালিয়ে যেতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, অসাধু জেলেদের সঙ্গে কিছু অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত আছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনার আগেই তারা জেলেদের জানিয়ে দেয়। ফলে সতর্ক হয়ে যায় জেলেরা। এ কারণেই একাধিক অভিযান চালানো হলেও ইলিশ শিকার বন্ধ করা যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদী থেকে মাছ ধরে উপজেলার বিভিন্ন বাড়িতে ইলিশ মজুদ করে বিক্রি করেছে বেশ কয়েকটি চক্র। এদের মধ্যে প্রশাসন কয়েকজনকে আটক করে জরিমানা করেছেন। প্রতিদিন অনেকে নদীপাড় ও কাঁশবনের মধ্যে বসা অস্থায়ী হাট থেকে এসব মাছ কম দামে কিনে কৌশলে স্পিডবোট দিয়ে দ্রুত নদী পার হন। পরে সেগুলো চার থেকে পাঁচশত টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সদরপুরের ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পূরবী গোলদার জানান, আমি সব সময় নদীতে অভিযান পরিচালনা করে আসছি। ইলিশ শিকার বন্ধে নদীতে তিনটি মোবাইল টিম নিয়োজিত রয়েছে। নদীর পথ দীর্ঘ হওয়ায় অসাধু জেলেরা সুযোগ পেলেই নদীতে ইলিশ শিকারে নেমে যাচ্ছেন। তবে কঠোরভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, গত কয়েকদিনে দেড় শতাধিক জেলেকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যেমে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া অসাধু জেলেদের কাছ থেকে কয়েক লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। জব্দকৃত প্রায় ১০মন ইলিশ বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।