প্রচ্ছদ জাতীয় আশুগঞ্জে তিন শতাধিক চাতালকল বন্ধ, ১০ হাজার শ্রমিক বেকার

আশুগঞ্জে তিন শতাধিক চাতালকল বন্ধ, ১০ হাজার শ্রমিক বেকার

লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় সবচেয়ে বড় পাইকারী মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের তিন শতাধিক চাতালকল। ধান সংকট ও ধানের বাজারে সাথে চালের বাজারের সামঞ্জস্য না থাকায় লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ আশঙ্কায় বন্ধের পথে রয়েছে আরো শতাধিক চাতাল। এ কারণে বেকার হয়ে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন প্রায় ১০ হাজার চাতাল শ্রমিক।

দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বৃহত্তর হাওর অঞ্চল কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান আশুগঞ্জ মোকামে আসে। আর এসব ধান স্থানীয় ৪ শতাধিক চাতালকলে প্রক্রিয়াজাত করে চাউলে রূপান্তরিত করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।

আর এসব ধান স্থানীয় ৪ শতাধিক চাতালকলে প্রক্রিয়াজাত করে চাউলে রূপান্তরিত করেন চাতালে নিয়োজিত চাতাল শ্রমিকরা। শ্রমিকরা ভোর থেকে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ধান থেকে চাউল উৎপাদন করেন। কিন্তু বছরের শেষ সময়ে ধান সংকটে চাতাল মালিকরা লোকসানের মুখে পড়ে চাতালকলগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে করে চাতাল শ্রমিকরা নিজের পেটের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।

চাতালকলের শ্রমিক ফাতেমা বেগম জানান, ধানের অভাবে মিল মালিক মিল বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আমাদের জীবন-যাপন খুবই কষ্টের। মালিকের কাছ থেকে খুচরা টাকা নিয়ে কোনরকম বেঁচে আছি।

চাতালকলের আরেক শ্রমিক তৌহিদ মিয়া জানান, আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। বউ-বাচ্চা নিয়ে চরম কষ্টের মধ্যে আছি। এক বেলা খেতে পারলে আরেক বেলা উপোস থাকতে হয়। মালিকের কাছ থেকে ধার করে ঋণের বোঝা বেড়েই চলছে।

চাতালকল মালিক শাকিল আহমেদ ও মিজান মিয়া জানান, বছরের বৈশাখ থেকে চৈত্র পর্যন্ত ১২ মাস চলে চাতালের ব্যবসা। প্রতিবছরের শেষ দিকে ধানের সংকট দেখা দেয়। কিন্তু এ বছর সংকট বেশি হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। তাই বাধ্য হয়ে মিল বন্ধ করে দিচ্ছে মালিকপক্ষ।

ধানের মোকামে ধান নিয়ে আসা পাইকার ও কৃষকরা জানান, বছরের শেষ সময়ে ধানের আমদানি কম হচ্ছে। তবে নতুন ধানের বাজারে আসলে কিছুটা বাজারে ধানের আমদানি বাড়বে। তবে দাম কম থাকলে লোকসানের মুখে পড়বে তারা।

আশুগঞ্জ উপজেলা চাতালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. শাহজাহান সিরাজ জানান, ধান সংকটের কারণে ইতিমধ্যে অধিকাংশ চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলো বন্ধের পথে। সব ব্যবসায়ীই এখন লোকসানের মুখে। চাতালকলের শ্রমিকগুলো বেকার হয়ে কষ্টে দিন পার করছে। তবে নতুন ধান বাজারে আসলে ধানের সাথে চাউলের বাজার স্থিতিশীল হলে ব্যবসায়ী লোকসানের হাত থেকে বাঁচবে।