প্রচ্ছদ খেলাধুলা আর্জেন্টিনার প্রথম শিরোপা, গৌরবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিতর্কও

আর্জেন্টিনার প্রথম শিরোপা, গৌরবের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিতর্কও

বিশ্বকাপ ট্রফি গ্রহণের পর আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ড্যানিয়েল প্যাসারেলার উল্লাস। পাশেই আর্জেন্টিনার নায়কেরা

আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা! তার পরেই শুরু গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। বিশ্বকাপ ফুটবল। এক মাস সারা পৃথিবীকে এক সুরে বেঁধে রাখবে সেই এক খেলা। সারা বিশ্ব জুড়ে কয়েক কোটি মানুষ টিভির পর্দাতেই রোনালদো, মেসি, নেইমারদের পায়ের জাদুতে মগ্ন হবেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে এসে গেল ফুটবল বিশ্বকাপের মৌসুম। দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের মাসকট ‘জাভিবাকা’।

প্রায় শতবর্ষের কাছাকাছি চলে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের শুরুটা হয়েছিল কিভাবে? ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসই বা কি ছিল? বিশ্বকাপের আগের আসরগুলো কেমন ছিল? রাশিয়া বিশ্বকাপের আগে এ প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে। তাঁদের জন্য রাইজিংবিডি’র বিশেষ আয়োজন ‘‘ফিরে দেখা বিশ্বকাপ’’। ধারাবাহিকভাবে প্রচার করা হবে বিশ্বকাপের আগের ২০টি আসর। আজ প্রকাশ করা হচ্ছে একাদশ পর্ব

ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জয়। রাজধানী বুয়েনোস আইরেসে জনতার ঢল। সমর্থকদের উল্লাস ছিল বাধনহারা

১৯৭৮ বিশ্বকাপ: ঘরের মাঠে রাজা আর্জেন্টিনা। কথাটা বললে কি খুব বেশি ভুল হবে? হওয়ার তো কথা না। ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ তো বলছে সে কথাই। সেবারই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৬৬ সালের ৬ জুলাই আয়োজক হিসেবে আর্জেন্টিনার নাম ঘোষণা করে ফিফা। ইংল্যান্ড ও মেক্সিকো নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আর্জেন্টিনা সুযোগ পায় বিশ্বকাপ আয়োজনের। আর প্রথম আসরেই বাজিমাত তাদের। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে প্রথম বিশ্বকাপের রানার্সআপরা।

এক অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে আছে ওই বিশ্বকাপ। ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর চার দশকের বেশি সময়ে বিশ্বকাপের নয়টি আসরে আর্জেন্টিনা শেষ চারে উঠতে পারেনি একবারও! ৭৮’এ ঘরের মাঠে সেমিফাইনালের টিকিট পাওয়ার পর তাদের আর আটকে রাখা যায়নি। মারিও কেম্পেস, ড্যানিয়েল বেরটনি কিংবা আলবের্টো টারানটিনিরা বিশ্বকাপের মুকুট জিতে শান্ত হন।

৬ গোল করে সেবার গোল্ডেন বুট পেয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড মারিও কেম্পেস। বিগ ফাইনাল ম্যাচেও করেছিলেন জোড়া গোল

৬ গোল করে সেবার গোল্ডেন বুট পেয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড মারিও কেম্পেস। আর্জেন্টিনার ঘরে উঠেছিল ফিফা ফেয়ার-প্লে ট্রফিও। ২৫ দিনের টুর্নামেন্টটি শুরু হয়েছিল ১ জুন। আর্জেন্টিনার ৫টি শহরের ৬টি ভেন্যুতে হয়েছিল ১৬ দলের ৩৮টি ম্যাচ। ওই টুর্নামেন্টে মোট গোল হয়েছিল ৩৮টি। নেদারল্যান্ডসে ৩-১ গোলে হারিয়ে আর্জেন্টিনা জিতেছিল শিরোপা। ইতালিকে ২-১ গোলে হারিয়ে ব্রাজিল হয়েছিল তৃতীয়।

যদিও ওই বিশ্বকাপকে ঘিরে রয়েছে বিতর্ক। বিতর্ক আয়োজক আর্জেন্টিনাকে নিয়েই। ফাইনালে যাওয়ার জন্য দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে কমপক্ষে ৪ গোলের ব্যবধানে জিততে হতো। কারণ একই গ্রুপে থাকা ব্রাজিল আগের ম্যাচে পোলান্ডের বিপক্ষে জয় পায় ৩-১ ব্যবধানে। তাই পেরুর বিপক্ষে ৪ গোলের ব্যবধানে জিততে পারলেই আর্জেন্টিনা যাবে ফাইনালে।

বিশ্বকাপে ব্যবহৃত অ্যাডিডাস কোম্পানির অফিসিয়াল বুট

কিন্তু বিতর্কের জন্ম দিয়ে আর্জেন্টিনা সেই ম্যাচ জিতে নেয় ৬-০ গোলে! প্রথমার্ধে মাত্র ২-০ গোলে এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে ৪ গোল করেন কেম্পেস, হাউসম্যানরা। শুধু বিশ্বকাপ নয়, ফুটবল ইতিহাসের অমীমাংসিত রহস্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে ম্যাচটি।

সে সময় ইংলিশ গণমাধ্যম একাধিক প্রতিবেদন  করেছিল পেরুর গোলরক্ষককে নিয়ে। কারণ গোলরক্ষক জন্ম নিয়েছিলেন আর্জেন্টিনাতে। আবার কলম্বিয়ার গণমাধ্যম প্রতিবেদন করেছিল, রাজনৈতিক কারণে আর্জেন্টিনাকে বড় ব্যবধানে জিতিয়েছিল পেরু। কারণ সে সময়ে পেরুর গমের বিশাল অংশের জোগানদাতা ছিল আর্জেন্টিনা। এবং লাতিন আমেরিকার এক সাময়িকী জানায়, আর্জেন্টিনার জেলে বন্দী ১৩ জন পেরুর নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার বদলে জয় দাবি করে আর্জেন্টিনা।

আর্জেন্টিনাকে দেওয়া হয় এই মেডেলটি। বিজয়ীদের মেডেল

গুজব, বিতর্ক সেই সময় থেকে এখনো চলছে। ওই বিশ্বকাপের কোনো তদন্ত হয়নি, তাই সঠিক কোনো তথ্য ফিফা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। তবে দিন শেষে হাসিটা হাসেন ওই ড্যানিয়েল প্যাসারেলা। তার হাতেই ওঠে আর্জেন্টিনার প্রথম রূপালি সেই ট্রফিটা।