প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ আপত্তি উপেক্ষা করেই পাস হলো বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল

আপত্তি উপেক্ষা করেই পাস হলো বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল

সাংবাদিকসহ অংশীজনদের আপত্তি উপেক্ষা করে পাস হলো বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল। এতে বহুল আলোচিত ৩২ ধারা বহাল রাখা হয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি অফিশিয়াল সিক্রেসি এ্যাক্টের আওতাভূক্ত অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওযার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ১৪ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ৩২ (২) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি উপধারা-১ এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুন:পুন: সংঘটন করেন তাহা হইলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

আজ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এরপরই বিলটির ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনীর প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র এমপিরা। কন্ঠভোটে তাদের প্রস্তাব নাকচ হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে ১৩টি দফার ওপর সংশোধনীর প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টির তিন এমপি। তারা হলেন-গাইবান্ধা-১ আসনের শামীম হায়দার পটোয়ারী, বেগম রওশন আরা মান্নান ও ফখরুল ইমাম।

তাদের প্রস্তাবে শব্দাবলী বর্জন, প্যারা, সংখ্যা ও বন্ধনী প্রতিস্থাপন করার কথা বলা হয়েছে।

কণ্ঠভোটে তাদের প্রস্তাব নাকচ হয়। বিলে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব দেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্রর ১২ এমপি। এ তালিকায় ছিলেন- নুরুল ইসরাম ওমর, সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসরাম মিলন, বেগম নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, বেগম মাহজাবীন মোরশেদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মো. রুস্তম আলী ফরাজী, বেগম রওশন আরা মান্নান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মোহাম্মদ নোমান। তারা ৩০শে অক্টোবরের মধ্যে জনমত যাচাইয়ের জন্য বিলটি পাঠানোর দাবি জানান। স্পিকার বিষয়টি কন্ঠভোটে দিলে তা নাকচ হয়।

এরপর বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্রর ৮ এমপি। এ তালিকায় আছেন- নুরুল ইসলাম ওমর, সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম মিলন, রুস্তুম আলী ফরাজী, বেগম রওশন আরা মান্নান ও শামীম হায়দার। নিজেদের মনোনীত ৩,৪ ও ৫ সদস্যর বাছাই কমিটিতে বিলটি পাঠিয়ে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার দাবি তোলেন। কন্ঠভোটে তাদের সে প্রস্তাবও নাকচ হয়। এরপরই কন্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। আইনটি পাস হওয়ায় স্বাধীন সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পড়বে বলে বিভিন্ন মহল থেকে আগে থেকেই শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ এরই মধ্যে আইনটি প্রত্যাখ্যান করেছে। সাংবাদিক ইউনিয়নও আইনটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। আইনে ঔপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অন্তর্ভুক্ত করে এর পরিধি আরো বাড়ানো হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে কেউ ওই অ্যাক্ট ভঙ্গ করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার সাজা হবে। আইনে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার ও তল্লাশির ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। গত ২৯শে জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা।

তখন থেকেই আইনটি নিয়ে আপত্তি ওঠে। সম্পাদক পরিষদ এই আইনের ৮,২১,২৫,২৮,২৯,৩১,৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানায়। এছাড়া, ১০টি পশ্চিমা দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা আইনের ২১,২৮,৩২ ও ২৫ ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। সংসদীয় কমিটি সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। কমিটি প্রতিবেদন দিতে তৃতীয় দফায় ১১ই সেপ্টেম্বর এক মাসের সময় নিয়েছিল। ১৭ই সেপ্টেম্বর তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপন করে। ওই প্রতিবেদনে অংশীজনদের মতামতের তেমন কোন প্রতিফলন ঘটেনি।