প্রচ্ছদ আজকের সেরা সংবাদ অ্যাপস ভিত্তিক পরিবহন সেবায় কোণঠাসা সিএনজি অটোরিকশা

অ্যাপস ভিত্তিক পরিবহন সেবায় কোণঠাসা সিএনজি অটোরিকশা

মোবাইল ফোনে অ্যাপস ভিত্তিক পরিবহন সেবার দৌরাত্মে মুখ থুবড়ে পড়েছে সিএনজি অটোরিকশা সেবা। বিআরটিএ কর্তৃক সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও মিটার অনুযায়ী ভাড়া নেইনি সিএনজি মালিক ও চালকেরা। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে যাত্রীরা ভোগান্তিতে থাকলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই সিএনজির সেবা নিতে হতো। বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে সেবা পাওয়া এবং সিএনজির চেয়ে ভাড়া কম হওয়ায় ‘উবার’ ও ‘পাঠাও’ এর মতো অ্যাপস ভিত্তিক পরিবহন সেবার দিকে ঝুঁকছে ঢাকার যাত্রীরা। আর এতে বিপাকে পড়েছেন সিএনজি অটোরিকশার চালকরা। আগের মতো যাত্রী না পেয়ে অনেকে এখন মিটারে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। যাত্রীর অভাবে মাঝে মাঝে রাজধানীর নির্দিষ্ট রুটে ভাড়াও খাটাচ্ছেন।কারওয়ান বাজার এলাকার পেট্রো বাংলার মোড় থেকে হাতিরঝিল হয়ে রামপুরা ও মেরুল যাওয়ার রুটটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের কাছে। অল্প সময়ে বেশ ভালোই ইনকাম হয় বলে যাত্রী সংকট থাকলে এখানে এসে তারা খুচরা ভাড়ায় খেপ মারেন।

সিএনজিচালক রমিজ মিয়া পেট্রো বাংলার সামনে থেকে যাত্রী নিয়ে যাবার সময় বলেন, এখানে কোনও লাইনম্যান নাই, কাউকে চাঁদা দিতে হয় না। পেছনের সিটে তিনজন আর ড্রাইভারের সিটে একজন। প্রতিজনের ভাড়া ২৫ টাকা করে মোট ১০০ টাকা। গন্তব্যে পৌঁছাতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগে। রাস্তায় জ্যাম কম থাকে। এটা খুব লাভজনক রুট। তাই ভাড়া না থাকলে এখানে এসে খেপ মারি।হঠাৎ যাত্রী সংকটের কারণ জানতে চাইলে রমিজ মিয়া বলেন, মোবাইল অ্যাপস ভিত্তিক বিভিন্ন পরিবহন সেবা জনপ্রিয় হয়ে উঠার কারণে যাত্রী সংকট চলছে। যাত্রীরা কম খরচে যেতে পারছে। তারা সবসময় মিটারে যেতে চায়। এতে আমাদের লস হয়। মালিককে টাকা জমা দিয়ে তেল খরচের পর আমাদের নিজেদের কিছু থাকে না। তাই মিটারে গেলে আমাদের লস।মোবাইল অ্যাপস ভিত্তিক বিভিন্ন সেবা যেমন উবার, পাঠাও, ও ভাই এবং মেয়েদের জন্য ও বোন, স্যাম সেবাগুলো চালু আছে।

বাংলামোটরের মোড়ে গাড়ির অপেক্ষায় থাকা অ্যাডভোকেট ফারজানা আক্তার বলেন, আমার প্রায়ই পেশাগত কাজে সদরঘাট যেতে হয়। মহিলা মানুষ বলে হেলপাররা বাসে নিতে চাইতো না। একটা সময় ছিল যখন নিরুপায় হয়ে সিএনজি চালকদের যেকোনও শর্তে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য মেনে নিতে হতো। অনেক সময় তারা চুক্তিতে ভাড়া নিতো। আর সিএনজিতে উঠার পর মিটার চালাতো। পরে বলতো আপা সামনে পুলিশ ধরলে বলিয়েন মিটারে যাচ্ছি।তিনি আরও বলেন, বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে এতদিন সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহার করলেও এবার অ্যাপস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক পরিবহন প্রতিষ্ঠান ‘উবার’ ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘পাঠাও’ ব্যবহার করছি। আগে সিএনজি’তে ভাড়া দিতে হতো তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা। এখন পাঠাও বা উবারে গেলে ভাড়া আসে অর্ধেক। আর দ্রুত পৌঁছানো যায়।কারওয়ান বাজার এলাকার পেট্রো বাংলার মোড় থেকে লোক নিচ্ছে সিএনজিচালকরাও ভাই অ্যাপস এর সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি মোবাইল অ্যাপস বাইকের পাশাপাশি গ্রাহকসেবাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে নিজেদের সেবা তালিকায় ৬০০ সিএনজি-অটোরিকশা যুক্ত হয়েছে। সিএনজি এবং গাড়িকে এ সেবায় সংযুক্ত করলেও সিএনজি চালকদের কাছ থেকে সেরকম সাড়া পাননি। সিএনজি চালকদের দাবি- তারা অ্যাপস এর নির্ধারিত ভাড়ায় চললে তাদের লস হয়।অ্যাপস ভিত্তিক এই পরিবহন সেবায় যাত্রী ও বাইকারদের অথবা গাড়ির চালকদের জন্য আলাদা দুটি অ্যাপ রয়েছে। যার মাধ্যমে বাইকারদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন যাত্রীরা। এর ন্যূনতম ভাড়া ২০ টাকা। প্রতি কিলোমিটার গুনতে হবে ১০ টাকা, এর সঙ্গে যুক্ত হবে প্রতি মিনিটে পঞ্চাশ পয়সা। অর্থাৎ কেউ যদি ৩ কিলোমিটার যান আর সেক্ষেত্রে ১৫ মিনিট সময় লাগে এক্ষেত্রে ভাড়া আসবে মাত্র ৫৭.৫০ টাকা। এই পুরো খরচ আপনার অ্যাপেই চলে আসবে। তাই বাড়তি ভাড়া নেয়ারও কোনও সুযোগ থাকছে না।অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কিংবা চালকের অনিয়মের বিরুদ্ধে অ্যাপেই অভিযোগ দিলে আছে শাস্তির ব্যবস্থাও। বিদেশি প্রতিষ্ঠান ‘উবার’ যাত্রীসেবায় প্রাইভেটকারের পাশাপাশি নিয়ে এসেছে মোটরসাইকেলও। ‘পাঠাও’ নামে অ্যাপস ভিত্তিক দেশীয় আরেক প্রতিষ্ঠানও নিয়ে এসেছে একই সেবা।